পুনর্গঠন হচ্ছে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল


প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দুই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে একত্রিত করে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। দুই ট্রাইব্যুনালের একটি নিষ্ক্রিয় করে অপরটি সচল রাখা হবে। তবে একটি নিষ্ক্রিয় করা হলেও ওই ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত হচ্ছে না। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কম থাকায় আপাতত একটি ট্রাইব্যুনালেই বিচার কাজ চলবে। তবে তদন্তধীন মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপর ট্রাইব্যুনালটিও সচল করা হবে।  

সূত্র জানায়, দুই ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের কমপক্ষে চারজনকে সরিয়ে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নেয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্ট থেকে একজন বিচারপতি এনে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে।

একজনকে চেয়ারম্যান করে হাইকোর্ট থেকে আরো একজন বিচারপতি নিয়ে এসে এক ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় হবে। সে হিসেবে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হচ্ছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই।

তবে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রধান কে হচ্ছেন তা নিশ্চিত করেনি আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিমকোর্ট। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দুই একদিনের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে।  
 
একজন চেয়ারম্যান ও দুইজন সদস্যের নাম প্রস্তাবনা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আগামী রোববারের মধ্যে পুনর্গঠিত হতে পারে ট্রাইব্যুনাল।

সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও সদস্য বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিঞাকে সরিয়ে আনা হবে সুপ্রিমকোর্টে।

অপরদিকে, ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক ও ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচবারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম থাকছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের দুই বিচারপতির নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, বিচারপতি আমির হোসাইন ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী। সে হিসেবে আপাতত দুইটি থেকে একটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের সংশোধন করা বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেকোনো একটি ট্রাইব্যুনাল অগঠিত থাকলে, তাদের কার্যক্রম গঠিত অন্য ট্রাইব্যুনালে চলতে পারবে। একই সঙ্গে আপিল বিভাগে যেকোনো রায় বা আদেশ পালনে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে যেকোনো ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুইটির পরিবর্তে একটি ট্রাইব্যুনাল রাখা উচিত। তাই শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হত্যা-গণহত্যা চালিয়েছিল বাঙালির বিরুদ্ধে তাদের ঐতিহাসিক বিচারালয় এই ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশান্তরি, ধর্মান্তরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট এলাকায় গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়া এবং দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চিহ্নিত প্রায় ২১ মানবতাবিরোধীর বিচার শেষ হয়েছে এই ট্রাইব্যুলে। চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি হয় দুইজনের। বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালের হাতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছয়টি। ফলে সরকার মনে করছে একটি ট্রাইব্যুনালই যথেষ্ট জমে থাকা মামলা পরিচালনার জন্য।

তবে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কমলে বিচারে চাপ সৃষ্টি হবে। সে হিসেবে একটি ট্রাইব্যুনাল কার্যকর থাকলে ভবিষ্যতে মামলা জট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্য ট্রাইব্যুনালের বিধিমালা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে কার্যকর থাকা  ট্রাইব্যুনাল অপর ট্রাইব্যুনালের বিচারের সব দায় গ্রহণ করতে পারবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের শীর্ষ নেতাদের মামলা শেষ হবার পর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের আসামিদের মামলা আসছে; যা একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেই বিচার করা সম্ভব। এতে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। অন্যদিকে আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে সমর্থন করে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন পক্ষও বলেছে, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। একটি ট্রাইব্যুনাল হলেও তদন্ত বা বিচারে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।

ভারপ্রাপ্ত প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ট্রাইব্যুনাল কয়টা থাকবে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। তদন্ত সংস্থা যে সমস্ত মামলার তদন্ত শেষে যে রিপোর্ট দেবে, সেই মামলাগুলো আমরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করি। এখানে কয়টি ট্রাইব্যুনাল থাকল সেটা মুখ্য বিষয় নয়। মামলা আসলেই আমরা আইনগত দিক বিশ্লেষণ করে তা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরি। একটি ট্রাইব্যুনাল হলেও কোনো অসুবিধা নেই।

এদিকে, তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, তদন্ত অব্যাহত থাকবে।  যে সমস্ত মামলা আছে তা তদন্ত শেষ হলে নতুন করে আরও মামলার তদন্ত শুরু করা হবে। যেহেতু দীর্ঘ ৪২ বছর পর মামলার কাজ করতে হচ্ছে, সে কারণে সব সময় সতর্কতার সঙ্গে এগুতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক আসামির মৃত্যু হয়েছে। সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক ভিকটিম ভারতে চলে গেছেন। আবার অনেকে মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদেরকেই যাচাই-বাছাই করে সাক্ষী করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল একটি হলেও আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল করতেই পারে।

 ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে পাঁচশ ৮৪টি অভিযোগ এসেছে। এর আসামি রয়েছে ৩২৩০ জন। এ সমস্ত অভিযোগ থেকেই তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে যাচ্ছে।

এফএইচ/এএইচ/একে/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।