শূন্য পদের ঝক্কি পোহাচ্ছে বিএনপি!

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ০৯ মার্চ ২০১৯

বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে চলেছে। অথচ এখনও শূন্য রয়েছে দলের স্থায়ী কমিটিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপির নতুন কমিটি গঠিত হয়। সেই থেকেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার ও তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে এখন দলের স্থায়ী কমিটির মোট পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে।

সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুব বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদ শূন্য থাকায় বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রদলের বেশ করুণ দশা।

আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদল নেতাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত এক দশকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অবস্থান তৈরি করতে না পারলেও ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে তারা ক্যাম্পাস সরগরম রাখার চেষ্টা করছেন। পাশপাশি নয়াপল্টনে বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রনেতারা যাতায়াত করছেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে সাবেক ছাত্রদল নেতারা বর্তমান নেতাদের গাইড করছেন।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন (কারাগারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত), শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আমিরুজ্জামান খান আলীম, আব্দুল বারী ড্যানি, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, আব্দুল খালেক, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, হায়দার আলী লেলিন, ওমর ফারুক শাফিন, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মতিন, আবু সাইদ, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দাবি, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদ শূন্য থাকায় সংগঠনকে বেশ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

তার ভাষ্য, একদিকে যেমন ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের তেমন নিয়ন্ত্রণে নেই, অন্যদিকে সংগঠনটির জবাবদিহিতাও নেই বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদ শূন্য থাকায়। ফলে সংগঠনটির তেমন কোনো পারফরমেন্সও নেই। যা আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের আলোচনায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।

ছাত্রদল দেখভালে সুনির্দিষ্ট কোনো নেতার দায়িত্ব না থাকায় সংগঠনটির বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চললেও এখনও ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি থাকায় ছাত্রদলকে নির্দেশনা দেয়ার মতো বর্তমানে কেউ নেই। এ কারণে ছাত্রদল ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি গঠন করে সারাদেশে দায়িত্বপালন করলেও ছাত্রদল নেতারা কিন্তু তা পারেননি। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সংগঠনটির এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে অনীহা ছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা ব্যালট ছিনতাই করবে। তাই এ নির্বাচনে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের বৈধতা দিয়ে কী লাভ? এ অবস্থায় একপ্রকার জোর করেই ছাত্রদলকে দিয়ে ডাকসু নির্বাচন করানো হচ্ছে।

কিন্তু সাবেক ছাত্রদল নেতাদের বক্তব্য, ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনে যদি অংশ না নেয় তাহলে ছাত্র সমাজের কাছে তারা কী মেসেজ দেবে? ছাত্রদল মরে গেছে! তাই ডাকসু নির্বাচনে যেতে হবে, ক্যাম্পাসে অবস্থান গড়তে হবে। ক্যাম্পাসে গিয়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিতে পারলে সেটাও ছাত্রদলের জন্য ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে কম অর্জন হবে না। এছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার একটা পরিবেশও তৈরি হবে।

সংগঠনটির ওই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক/সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদে কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলে ছাত্রদলের বর্তমান লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হতো না। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সাবেক ছাত্রদল নেতারা এখন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন। দুটি পদ শূন্য থাকলেও এখন সাবেক ছাত্র নেতারা সবাই ছাত্র বিষয়ক ও সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। ইতোমধ্যে ডাকসুতে ছাত্রদল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব পেয়ে রাজনীতির আলোচনায় এ্যানি চৌধুরীর গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

বিএনপির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদ শূন্য থাকায় ডাকসু নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা- জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ছাত্র বিষয়ক পদ যখন শূন্য আছে, সেটা পূরণের জন্য আমরা সাবেক ছাত্রনেতারা যৌথভাবে কাজ করছি। এটা শূন্যতা না বরং এর মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো কমিটি হয়নি। সাবেক ছাত্রনেতা, বিএনপির বর্তমান প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা সাবেক যারা আছি, সবাই মিলে যৌথভাবে কাজ করছি।’

ছাত্র বিষয়ক ও সহ-ছাত্র বিষয়ক পদ শূন্য থাকায় ডাকসু নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা-এমন প্রশ্নে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘না না, এটা তো পার্টি থেকেই নির্ধারিত। পার্টিতে আমরা যেসব সাবেক ছাত্রনেতা আছি, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে যারা অংশ নিয়েছে তাদের গাইড করছি। সুতরাং এখানে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক থাকলেও যা, না থাকলেও তাই।’

কেএইচ/এমএমজেড/এনডিএস/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।