অর্থনীতিতে মূল্যায়িত হচ্ছে না নারীশ্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অপরিসীম। গৃহস্থালি কাজের মাধ্যমে পারিবারিক ক্ষেত্রে তো বটেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে নারীরা। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে তার অবদানের প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে না।

পুরুষরা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য শ্রমশক্তি বিক্রি করে আয় অর্জন করে। আর জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বাকি সব কাজ অর্থাৎ গৃহস্থালি বা সাংসারিক কর্মকাণ্ডের বোঝা বহন করে নারীরা। যার অর্থনৈতিক মূল্য ধরা হয় না বলে তা স্বীকৃতিহীন অদৃশ্য অবদান হিসেবে থাকে। ঘরের কাজ বা গৃহশ্রমকে তাই জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অথচ ক্রমশ বিশ্বজুড়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে বিশেষত অর্থনীতিতে নারীর ক্রমবর্ধমান অবদান ও ভূমিকা, কর্মকাণ্ড বা গৃহশ্রমে লুকায়িত অর্থনীতির পরিমাণ নিয়ে গবেষণা করেছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের সর্বশেষ সংশোধিত জাতীয় আয়ের পরিমাপ সমাজে নারীর অদৃশ্য অবদানের বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। এ হিসাবে দেখা গেছে, পরিবারে তৈরি হয়ে পরিবারেই ব্যবহৃত হয় এ রকম জিনিসের বাজার দাম অনুযায়ী সারা দুনিয়ায় মোট ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার তথা ১৬ লাখ কোটি ডলার মূল্যের দ্রব্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ১১ ট্রিলিয়ন ডলার উৎপাদন করে নারীরা।

অন্যভাবে বললে, বিশ্বের মোট উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে নারীদের গৃহকর্ম থেকে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় । যার জন্য তারা আলাদা কোনো দাম পায় না। এ হিসাবে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে প্রতি বছর ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যাচ্ছে; যা গণনা করা হচ্ছে না। আর এ ১৬ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে নারীর অবদান হচ্ছে ১১ ট্রিলিয়ন ডলার। তাই প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে নারীর অদৃশ্য অবদান হলো ১১ ট্রিলিয়ন ডলার।

জাতিসংঘের অপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা সংসারে যে কাজ করে তার দাম দিতে হলে এবং তা সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত করলে সমস্ত পৃথিবীর মোট উৎপাদনের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সেলারিডটকম নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের একটি গবেষণায় দেখায় যে, মায়েরা পরিশ্রমবিহীন যে সব কাজ করে সেগুলোকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করতে হলে প্রত্যেক মাকে গড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১২১ ডলার সমপরিমাণ বেতন দিতে হতো।

শামীম হামিদের গবেষণা প্রতিবেদন ‘ওয়াই ওমেন কাউন’ এ দেখানো হয়, বাংলাদেশ জাতীয় আয়ের সঙ্গে নারীদের অন্যান্য কাজের পারিশ্রমিকবিহীন কর্মকাণ্ডের অবদান যদি যোগ করা হতো তাহলে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান ২৫ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ ভাগ এবং পুরুষদের অবদান ৭৫ থেকে কমে ৫৯ শতাংশে নেমে আসতো।

এ বিষয়ে ঢাকার সরকারি সংগীত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আলিয়া পারভীন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি ঘরে বাইরে ব্যাপক শ্রমদান করছে। অতিরিক্ত এ কাজের চাপ সমন্বয় করতে নারীরা হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় গৃহস্থালি কাজে নারীকে পুরুষের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা যেমন আবশ্যক হয়ে পড়েছে, তেমনি সাম্যের সমাজ গড়তে নারীর গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নও জরুরি হয়ে পড়েছে।’

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মালিকা বিলকিস বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রথম ও প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে নারীর উন্নয়ন। তবে বাংলাদেশে নারীদের অন্যতম কারণ হচ্ছে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের প্রচণ্ড অভাব। তারপরও নারীরা বেকার কিংবা অলস সময় কাটায় না।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে মোট শ্রমশক্তির ৪৮ ভাগই হচ্ছে নারী। এ ছাড়া জাতীয় আয়ে নারীর অবদান ৩০ ভাগ। পৃথিবীর মোট কাজের তিন ভাগের দুই ভাগ করে নারী, এবং পুরুষদের তুলনায় ১৫ গুণ সাংসারিক কাজের বোঝা বহন করে নারীরা। কিন্তু নারীর গৃহকর্মের কোনো অর্থমূল্য না থাকায় প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি থেকে নারীর অদৃশ্য অবদান হিসেবে ১১ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যাচ্ছে।’

এমইউএইচ/এনডিএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।