দ্বিগুণ মাদক উদ্ধার, ৯৫% মামলার চার্জশিট
মাদকের বিরুদ্ধে ২০০৮ সাল থেকে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মাদকবিরোধী সর্ববৃহৎ অভিযানটি শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধরতে মে মাস থেকে উঠেপড়ে লাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০১৮ সালের মার্চের দিকে সব বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে। এসব বাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। মাদক সংক্রান্ত ৯৫ শতাংশ মামলার তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া উদ্ধার মাদকের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় দিগুণ বেড়েছে।
আরও পড়ুন >> এত রাতে এখানে কী, উত্তর দিতে পারেননি এসআই
ডিএমপি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে মাদক মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ২৬৯টি। এসব মামলায় ২৫ হাজার ৮০৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বছরের শেষদিন পর্যন্ত তদন্ত শেষে ১৪ হাজার ৫৩১টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে যা মোট মামলার ৯৫ শতাংশ।
সচরাচর এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক চার্জশিট আদালতে জমা দেয়ার রেকর্ড নেই। বর্তমানে মাদক সংক্রান্ত মোট ৭৩৮টি মামলা তদন্তাধীন।
ডিএমপি জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানের সফলতা ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে দিগুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ঢাকা থেকে ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯৭ পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩০। ২০১৮-তে হিরোইন উদ্ধারের পরিমাণ ছিল ২৭২ কেজি, যা আগে বছরে ছিল মাত্র ১৬৩ কেজি।
ডিএমপি আরও জানায়, ২০১৮ সালে ঢাকায় চার হাজার ৭২৭ কেজি গাঁজা উদ্ধার হয়, আগের বছর উদ্ধার হয়েছিল দুই হাজার ৮৭৪ কেজি।
আরও পড়ুন >> মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৮৩ হাজার ৩২৩ জন
এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। পুলিশও মাদকব্যবসায়ীদের ধরতে কোনো ছাড় দিচ্ছে না।’
‘মাদক উদ্ধারের পরিমাণ আগের তুলনায় দিগুণ বেড়েছে। শুধু গ্রেফতারই নয়, পুলিশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে। নানা কারণে ৭৩৮টি মামলা এখনও তদন্তাধীন। আশা করছি অচিরেই সেগুলোর তদন্ত শেষ হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ডিএমপির অভিযান চলমান থাকবে।’
এদিকে মাদকদ্রব্যের উদ্ধার তুলনামূলক বাড়লেও কমেছে কোকেন উদ্ধার। ২০১৭ সালে এক কেজি ৮০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার হলেও ২০১৮ সালে তা নেমেছে মাত্র ৭৫০ গ্রামে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি-ক্রাইম) রুবাইয়াত জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, ২০১৮ সালে দেশে কোকেনের চালান ঢুকতে পারেনি, তাই উদ্ধারের পরিমাণ কম।’
আরও পড়ুন >> টোকাই থেকে শত কোটি টাকার মালিক
এদিকে, চলতি বছর নতুন মাদক এনপিএস বা খাত উদ্ধারেও ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকটি অভিযানে ডিএমপি মোট দুই হাজার ৯৪৫ কেজি ৩৪ গ্রাম খাত জব্দ করেছে।
চলমান মাদকনির্মূল অভিযানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ছোট-বড় অনেক ব্যবসায়ী নিহত হন। গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সারাদেশ থেকে ৮৩ হাজার ৩২৩ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপির নিয়মিত অভিযানেও প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার হচ্ছেন। তবে ঢাকার মাদকব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষস্থানে থাকা ইশতিয়াককে গ্রেফতার করতে পারেনি ডিএমপি কিংবা পুলিশের কোনো ইউনিট।
এআর/এমএআর/আরআইপি