চসিক রাজস্ব বিভাগে জমা হয় না হোল্ডিং ট্যাক্স


প্রকাশিত: ০৫:২০ এএম, ২৫ আগস্ট ২০১৫

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগে ট্যাক্স আদায় হয় কিন্তু জমা হয় না চসিকের কোষাগারে। হোল্ডিং ট্যাক্স সঠিকভাবে আদায় এবং রাজস্ব বিভাগে জমা হলে কর্পোরেশন চালাতে সরকারের কাছে অর্থের জন্য ধরনা দিতে হবে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বছরের পর বছর ধরে নগরবাসীর দেওয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আত্মসাৎ করে আসছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে আদায় করা কোটি কোটি টাকা চসিকের তহবিলে জমা না দিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাই মেতে উঠেছেন অবাধ লুটপাটে।

এভাবে প্রায় কয়েক লাখ টাকা কর আত্মসাৎ করেছেন রাজস্ব বিভাগের তিন নম্বর সার্কেলের কর আদায়কারী শওকত আলী চৌধুরী। কয়েক’শ হোল্ডিংয়ের টাকা আত্মসাৎ করলেও তাকে মাত্র দুইটি হোল্ডিংয়ের কয়েক হাজার টাকা আত্মসাত দেখিয়ে ১৩ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করেছেন সিটি কর্পোরেশন।

গত বছরের ১২ মে গৃহকরের নয় কোটি টাকা অনিয়মের দায়ে বরখাস্ত হন কর কর্মকর্তা সারেক উল্লাহ।  পরে তাকে দায়মুক্তি দিয়ে স্বপদে বহাল করা হয়।  এছাড়া কর আত্মসাতের দায়ে ২০০৭ সালের আগস্টে উপ কর কর্মকর্তা, লাইসেন্স পরিদর্শকসহ ১৫ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।  পরবর্তীতে তাদেরকে আবার স্বপদে ফিরিয়ে আনা হয়।  

অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি সার্কেলের কর আদায়কারী, লাইসেন্স পরিদর্শকদের সঙ্গে উপ কর কর্মকর্তা, কর কর্মকর্তা, রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় অল্প শাস্তিতে পার পেয়ে যান দোষীরা।

কর্পোরেশন সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং রয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৯২টি।  এর মধ্যে সরকারি হোল্ডিং সংখ্যা এক হাজার ৬২৪টি।  বেসরকারি হোল্ডিং এক লাখ ৪৯ হাজার ১৬৮টি।  বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।  কর আদায়ের জন্য সার্কেল রয়েছে আটটি।

এসব সার্কেলের অধীনে কর আদায়কারী রয়েছে প্রায় ১২৫ জন।  এছাড়া রয়েছে লাইসেন্স পরিদর্শক, উপ কর কর্মকর্তা, কর কর্মকর্তা। একেক জন কর্মকর্তা-কর্মচারী একই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বপালনের কারণে কর আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম।  নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন।  রশিদও দেওয়া হয় তাকে।  পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে তিন বছরে তার নামে এক টাকাও জমা হয়নি।

পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা রফিক আহমদ। চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি চার হাজার টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করেন।  পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার একই রশিদে রেজাউল করিমের নামে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে জমা হয়েছে মাত্র ৭০টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশ্চিম বাকলিয়া এলাকার ১৫৯৭/২৮০৫ হোল্ডিং নম্বরের মালিক সোলেমান রশিদ। তিনি জানুয়ারীতে ৩ হাজার ২২১ টাকা গৃহকর আদায় করেন।  তাকে দেওয়া একই রশিদ নম্বরে (১৬০১৩) আরেক ব্যক্তি গোলাম আজমের নামে সিটি কর্পোরেশনে জমা হয় মাত্র ৬৪৪টাকা।
১৬৯০/এ/৩০৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ নাজের।  ১১ এপ্রিল পাঁচ হাজার ৪০ টাকা গৃহকর আদায় করেন তিনি।  একই রশিদে মাহামুদুর রহমানের নামে জমা হয় মাত্র ৪০৩ টাকা।  ২৬২৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের মালিক মহিউদ্দিন আহামদ।  তিনি জুলাইয়ে গৃহকর জমা দেন ছয় হাজার ৩০০টাকা।  সিটি কর্পোরেশনে জমা হয়েছে মাত্র ৫৬০টাকা।  

চকবাজার ধুনিরপুল এলাকার বাসিন্দা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান,‘তিন বছর ধরে নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেছি।  কিন্তু আমার একটি টাকাও সিটি কর্পোরেশনে জমা হয়নি।  পরে এলাকার লোকজন খবর পেয়ে সার্কেল অফিসে তাদের ট্যাক্সের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখেন যে রশিদ তাদের দেওয়া হয়েছে সে রশিদে অন্য জনের নামে নামমাত্র টাকা জমা হয়েছে।  কারো কারো টাকা জমাও হয়নি।  এভাবে প্রায় এলাকার ৯০ শতাংশ লোকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি মেয়র বরাবরে লিখিতভাবে জানানো হবে।’

রাজস্ব বিভাগের তিন নম্বর সার্কেলের কর কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন,‘তাৎক্ষণিক দুইটি রশিদে গরমিল পাওয়ায় শওকত আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।  আর কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি এক মাসও হয়নি।  ইতিমধ্যে রাজস্ব বিভাগের বেশকিছু অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে।  নগরবাসীর করের টাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। কারো বিরুদ্ধে কর আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন,‘হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীর কাছে সঠিক তথ্য না থাকায় এ সুযোগ নেয় কর আদায়কারীরা।  কর আদায় পদ্ধতি আরও কিভাবে উন্নত ও স্বচ্ছ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।

এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।