উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে ‘বিভক্তি’
>> একপক্ষ বলছে, নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি
>> অপরপক্ষ বলছে, গ্রহণযোগ্যতা হারাবে তাদের ‘বর্তমান প্রচারণা’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই মার্চে উপজেলা নির্বাচন আয়োজন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচন নিয়ে এখনই হিসাব কষতে শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে বিভক্তিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা নির্বাচনকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি।
অপর অংশের যুক্তি, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি নির্বাচনে অংশ নিলে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। উল্টো নেতাকর্মীদের উপর মামলা-হামলা আরও বাড়বে। এছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দলের পক্ষ থেকে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেটিও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দলের কোনো ফোরামে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা বা মতবিনিময় হচ্ছে। সেখানে নেতারা যার যার মতো করে মতামত ব্যক্ত করছেন। আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা নেই। আলোচনা হচ্ছে, দেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে, আমাদের করণীয় নিয়ে, ভবিষ্যত কর্মসূচি নিয়ে, তখন স্বাভাবিকভাবে এটাও চলে আসছে। কারণ অলরেডি নির্বাচন কমিশন ডিক্লেয়ার করছে মার্চে তারা ইলেকশন করতে চায়। কিন্তু এখন দেশে স্বাভাবিক সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনই আরেকবার সেটা প্রমাণ করেছে।’
‘বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে কোনো নির্বাচনেই জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন হবে না। এ কারণে আমাদের দলের অধিকাংশ নেতাই তৃণমূল পর্যায়ে বলেন বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বলেন, তারা আর এই নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ’
তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবারও নেতাকর্মীদের একটা হায়েনার কবলে ফেলে দেয়া হবে। যেটা গত নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) করেছে প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে। নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, গায়েবি মামলা, এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। এখনও এলাকায় ফিরতে পারছেন না অনেকে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট খুলতে পারছেন না। এমন একটা পরিবেশে আবারও নেতাকর্মীদের সম্মুখীন করতে চাই না। এ সরকারের অধীনে স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন বলেন, কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। এ প্রেক্ষাপটে নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ইলেকশনে জয়েন করব কি করব না; কারণ ইলেকশন নিয়ে তো আমাদের অনেক প্রশ্ন। ইলেকশন ঠিকভাবে হচ্ছে না, কমিশন ফেল করছে। তো এমন ইলেকশন করে তো লাভ নেই। সে জন্য যদি এটা তারা নিশ্চিত করতে পারে যে ইলেকশন ফেয়ার হবে এবং যথাযথ হবে, তাহলে ইলেকশনে আমরা পার্টিসিপেট করব। নিশ্চয়ই জনপ্রশাসনও তো অত্যন্ত ইমপর্টেন্ট, গ্রাসরুটে আমাদের অবস্থান তো অত্যন্ত ভালো।’
অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নামে কী ধরনের নির্বাচন হতে পারে তা দেশের মানুষ কদিন আগে দেখেছে। এরপর আবারও যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তার কি নিশ্চয়তা আছে? তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের উপরে যে হামলা-মামলার খড়গ গেল, সে অবস্থা-ই এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনও আলোচনাই হয়নি।’
‘জাতীয় নির্বাচনে সারাদেশের অনিয়ম ও কারচুপির তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আপাতত সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/আরআইপি