ইসি সচিব বেশি কথা বলছেন

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩০ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। সাবেক নির্বাচন কমিশনার। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। প্রশ্ন তোলেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে। কমিশনের বিদ্যমান আইন ও কাঠামোতেই নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব বলে মত দেন। ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে’ বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এ বিশ্লেষক। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি

জাগো নিউজ : রাজনীতির আলোচনা এখন নির্বাচন কমিশন ঘিরে। আপনি কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমিশনের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে কী বলবেন?

সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন একের পর এক ভুল করছে, আবার তারাই সংশোধন করতে চাইছে। বিএনপি অফিসের ঘটনায় পুলিশকে চিঠি দিয়ে ভুল স্বীকার করল। কমিশন বুঝতে পারল চিঠি দেয়া ঠিক হয়নি।

কমিশন নিজেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ইসি সচিব বেশি কথা বলছেন। নির্বাচন কমিশন সচিবের তো এত কথা বলার দরকার নেই। সারাদিন ব্রিফ করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। ‘নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষকরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন’- বললেন কমিশন সচিব। এসব কথা কেন? এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার সংকট তৈরি করবে। বক্তব্য লিখিত হওয়া উচিত।

জাগো নিউজ : কমিশনের এসব কথায় কী ইঙ্গিত পাচ্ছেন?

সাখাওয়াত হোসেন : এসব আলোচনা থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে ভুল ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন ধরুন, কমিশন বলছে, ‘দুনিয়ার কোথাও শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হয় না’। এ তথ্যের ভিত্তি কী এবং কাদের উদ্দেশ্যে বলছেন? যখন বলেন তখন অন্য অর্থও দাঁড়ায়।

এসব বলে শঙ্কা বা রঙ সিগন্যাল ছড়ানো উচিত নয়। মানুষ এমনিতেই শঙ্কায় আছে। রঙ সিগন্যালের তো অভাব নেই। আমি মনে করি, স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এসব পরিহার দরকার। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারে বসে অনেক কিছুই বলা যায় না।

জাগো নিউজ : পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানাল কমিশন। পুলিশের সাড়া মিলবে?

সাখাওয়াত হোসেন : কমিশন বলছে, কিন্তু পুলিশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে কিনা, তার ফলোআপ রাখার কথা। অ্যাকশন কী, তা দেখতে হবে। প্রশাসনের ওপর নির্বাচন কমিশনের কতখানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা বুঝতে হলে প্রচারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জাগো নিউজ : পুলিশ পক্ষপাত আচরণ করছে বলে বিরোধী পক্ষের অভিযোগ। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আপনি কী মনে করছেন?

সাখাওয়াত হোসেন : বিএনপি অফিসের সামনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি নিয়ে যা ঘটল, তার তদন্ত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। অথচ নির্বাচন কমিশন তদন্ত করতে চিঠি দিল পুলিশকে। পরে আবার কমিশন ভুল স্বীকার করল।

পুলিশ এখনও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার তফসিল ঘোষণার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিও পুলিশের জন্য বুমেরাং হবে।

জাগো নিউজ : কেন এমনটি মনে করছেন?

সাখাওয়াত হোসেন : এখন অস্ত্র বা মাদক নিয়ে অভিযানের প্রসঙ্গ আসল কেন? সারা বছর কী করেছে পুলিশ? এসব অভিযানে এ সময় রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হবে। যা সমাজে আরও অস্থিরতা তৈরি করবে।

বিশেষ কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযান পরিচালনা করলে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা নয়। অথচ পুলিশ এখন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। এখন একজন ওসি থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত সবাই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার নিয়ে পুলিশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যস্ত রাখলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে নির্বাচনে জটিলতা দেখা দেবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে প্রতিনিয়ত। কোনো প্রতিকার মিলছে না। অথচ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে।

জাগো নিউজ : পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কী হতে পারে?

সাখাওয়াত হোসেন : ইতোমধ্যে আমরা নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা টের পাচ্ছি। প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। জোটবদ্ধ হলেও অসংখ্য দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার সময় কখন কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল। পুলিশ যদি সঠিক ভূমিকা রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচনের ওপর প্রভাব পড়বে।

নিরাপত্তা নিয়ে ভয় থাকলে মহিলা বা দুর্বল চিত্তের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে চাইবেন না। নিরাপত্তা কোন কাঠামোতে নিশ্চিত করা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা বিষয়ে কাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করতে পারিনি।

আগে নিরাপত্তা নিয়ে এত জটিলতা ছিল না। প্রয়োজনও পড়েনি। কিন্তু এখন নিরাপত্তার হুমকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি প্রধান গুরুত্ব পাচ্ছে।

জাগো নিউজ : এখন প্রয়োজন...

সাখাওয়াত হোসেন : মানুষ তো পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছে না। পুলিশ নিজে থেকেই প্রিসাইডিং অফিসারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের তথ্য সংগ্রহ করছে। অথচ নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা জানেন না। এই না জানাও তো নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা।

পুলিশের ওপর মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। এ কারণে নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনকে বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।

জাগো নিউজ : পুলিশের ওপর বিশ্বাসের যে ঘাটতি, তা এই এক মাসে পূরণ করা সম্ভব?

সাখাওয়াত হোসেন : তা সম্ভব হবে না। কারণ বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। এ ক্ষতিপূরণের জন্য দায়িত্ব নেয়ার পরই কমিশনকে কাজ করা উচিত ছিল। সে উদ্যোগ তারা নেননি।

নির্বাচনের মূল আয়োজন হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে বাকি নির্বাচনগুলোও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

জাগো নিউজ : নির্বাচন বিতর্ক আগেও ছিল...

সাখাওয়াত হোসেন : ছিল বটে। তবে এখনকার মতো ভয়ঙ্কর বিতর্ক ছিল না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার প্রত্যেকটা নিয়েই বিতর্ক আছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আগে কখনও পড়েনি।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন চাইলে কমিশন বন্ধ করে দিতে পারত। দু-একটি নির্বাচন বাতিল করার মতো যথেষ্ট উপাদান ছিল। কিন্তু করা হয়নি।

জাগো নিউজ : বন্ধ করলেই কি সমাধান হতো?

সাখাওয়াত হোসেন : অন্তত উদাহরণ হয়ে থাকত। মাগুরার উপ-নির্বাচনের ঘটনায় তো বাংলাদেশের রাজনীতির ধারারই পরিবর্তন হলো। ওই সময় যদি কমিশন নির্বাচনটা বন্ধ করে দিত, তাহলে হয়তো বাংলাদেশকে আজ এ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি

নির্বাচন কমিশন একের পর এক ভুল করছে, আবার তারাই সংশোধন করতে চাইছে

অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধার নিয়ে পুলিশকে পরিকল্পিতভাবে ব্যস্ত রাখলে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে

এখন পর্যন্ত আমরা নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা বিষয়ে কাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা লক্ষ্য করতে পারিনি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।