প্রবাসীরা এবারও ভোটে নেই, কাজে আসছে না পোস্টাল ব্যালট
প্রবাসী, ভোটার এলাকা ছেড়ে দেশের আরেক জায়গায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী ও জেলখানা বা আইনগত হেফাজতে আছেন এমন ব্যক্তি এবারও ভোটের বাইরেই থাকছেন। ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালাটের মাধ্যমে তাদের ভোট নেয়ার জন্য আইন থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, মূলত বিষয়টি জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আইন থাকলেও ইসি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এছাড়া এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ভোটাররাও অবগত নন। তাই ইসির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি তারা। এসব কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ইসি স্বীকার করেছে ডাকযোগে ভোট নেয়ার বিষয়ে ভোটারদের আগ্রহ রয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক প্রবাসী ভোটার ও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা সহজ পদ্ধতিতে ডাকযোগে কিংবা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট দিতে চান।
জানা যায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটদানের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আরপিও-এর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিন ধরনের ব্যক্তি ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। তারা হলেন- সরকারি চাকরিরত ব্যক্তি, যে কিনা নিজ ভোটার এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চাকরি করছেন; কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের কোনো জেলখানায় বা অন্য কোনো আইনগত হেফাজতে আটক আছেন এবং ভোট নেয়ার কাছে নিয়োজিত ব্যক্তি ও বাংলাদেশের ভোটার অথচ প্রবাসে বসবাস করছেন এমন ব্যক্তি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। ভোটগ্রহণের দিন হতে ১৫ দিন আগে তাদের ভোট দিতে হবে।
পোস্টাল ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটাধিকারের দাবিতে সিইসির কাছে ঢাকায় স্মারকলিপি প্রদান
পোস্ট অফিস ও রিটার্নিং কর্মকর্তারদের মাধ্যমে এই ভোট দেয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিনই। এ জন্য নেই কোনো বাড়তি জনবল। আর পোস্ট অফিসেও ইসি কোনো নির্দেশনা দেয় না। এ জন্য পদ্ধতিটি আজও চালু হয়নি।
প্রবাসীরা ডাকযোগে ভোট দেয়ার জন্য অনেক বছর ধরে দাবি করে আসছেন। দেশের সরকারি কর্মকর্তাও এটি বাস্তবায়ন চাচ্ছেন। ডাকযোগে কিংবা ইভিএমের মাধ্যমে ভোটদানের অধিকার চেয়ে প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ সমিতি (প্রবাকস) সর্বশেষ ৫ জুলাই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেটে স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফাইজুন্নেছা।
দুই যুগ ধরে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে কর্মরত প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ সমিতির (প্রবাকস) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি রাজ্যের হেলোডেন ইউটিলিটি সার্ভিসের নির্বাচিত কমিশনার দেওয়ান বজলু চৌধুরী বুধবার রাতে টেলিফোনে এ ব্যাপারে জাগো নিউজকে বলেন, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার বিধান থাকলেও নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা না থাকায় প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। প্রবাসীদের আলাদা ভোটার তালিকা না থাকায় তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দেয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
ডাকযোগে কিংবা ইভিএমে ভোটদানের অধিকার চেয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফাইজুন্নেছার কাছে স্মারকলিপি দেয় প্রবাসী বাঙালি কল্যাণ সমিতি।
সংসদ সচিবালয়ের সহকারী লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান হাসিবুল ইসলাম বলেন, আমি জাতীয় সংসদে কর্মরত। আর ভোটার ঠাকুরগাঁওয়ের। কিন্তু ভোটের দিন এত দূরে ভোট দিতে যাওয়া সম্ভব হয় না। পোস্টাল বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে পারলে ভালো লাগতো।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ডাকযোগে ভোটদানের বিষয়ে অনেক আগ্রহ আছে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অনেকে জানতে চান কীভাবে ভোট দেয়া যায়। তবে বিভিন্ন কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে, ব্যালট পেপার ছাপা হয় প্রতীক বরাদ্দের পর। এটি হয় একেবারে শেষ সময়ে। তারপর ডাকযোগে বিদেশে পাঠানোর মতো সময় হাতে থাকে না। একেকটি নির্বাচনী এলাকার একেক রকম ব্যালট পেপার হয়। প্রধান দুই দলের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকেন। তাই একই ব্যালট পেপারে সারা দেশের ভোট নেয়া যায় না। সে জন্য আগে থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো সম্ভব না।
এ ব্যাপারে অভিবাসীবিষয়ক সাংবাদিক ওমর আলী বলেন, প্রবাসীদের ভোট নেয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইভিএম। নির্বাচন কমিশনকে আগ্রহী প্রবাসী ভোটারদেরকে ভোটের আগে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর ভোটারদের ডাটাএন্ট্রি করে একজন কর্মকর্তাসহ দূতাবাসে ইভিএম পাঠাতে হবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে পরীক্ষামূলকভাবে কোনো একটি দেশে ইভিএমে প্রবাসীদের ভোট নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের পুনঃতফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোট। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর।
এইচএস/বিএ