আর্থিক সংকটে বিএনপির নেতারা!

>> নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
>> খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার কষ্ট
>> নেতাকর্মীদের মনে উচ্ছ্বাস নেই
>> মনোনয়নপত্র কিনবেন না রিজভী

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আর দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার অবস্থান থেকে সরে এসেছে দলটি। সোমবার সকাল থেকে চলবে দলটির মনোনয়নপত্র বিক্রি। তবে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও আর্থিক সংকটে ভুগছেন দলের নেতারা। নির্বাচনে এই অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে দলটির নেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

যশোর-৪ আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র কিনবেন বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য টিএস আইয়ুব। 'কবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন-' জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা পাবো কই? টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে, অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামালা, এই পরিস্থিতিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া। আন্দোলনে সফল হতে হবে। আন্দোলনে সফল না হলে সংশয় থেকেই যাবে।’

টিএস আইয়ুবও বলছিলেন, ‘আন্দোলনে সফল না হলে দেশ ও জনগণের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার আহ্বায়ক মো. জানে আলম খোকা বলেন, ‘সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্তকে অবশ্যই স্বাগত জানাই।’

তবে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী মনে করেন, সাত দফা দাবি মানার আগে দলের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি।

তিনি বলেন, ‘এখনও আমাদের সাত দফা দাবি মানা হয়নি, ম্যাডামের মুক্তির আগে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি।’ গোপালগঞ্জে বিএনপির জন্য নির্বাচন করা অত্যন্ত কঠিন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতাদের মধ্যে চরম আর্থিক সংকট রয়েছে। মামলা-হয়রানিতে ঘরে থাকতে পারছেন না, তৃণমূল নেতারা বিপর্যস্ত। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার একটা কষ্টও রয়েছে। আমরা জানি, বেগম জিয়া ছাড়া আমরা নির্বাচনে সফল হবো না। এরপরও নির্বাচনে না গেলে তৃণমূল নেতারা আরও বিপর্যস্ত হবেন। সুতরাং নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে বলে আমি মনে করছি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব বলেন, ‘নির্বাচন ও আন্দোলন একই সঙ্গে চলবে। নেতাকর্মীরা মনে করে, নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হবে, তাতে করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।’

বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরাও চায় দল নির্বাচনে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল ম্যাডামের মুক্তি। দীর্ঘদিন ধরে নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত। এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

বাগেরহাট-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণার পর থেকে এলাকার নেতাকর্মীরা ফোনের পর ফোন দিচ্ছেন। তারা কালই (সোমবার) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে বলছেন।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার ইচ্ছা আছে।’

কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান কুমিল্লা-৪ আসন থেকে সোমাবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন।

তিনি বলেন, ‘একটা অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেতাকর্মীরা ব্যথিত, ভারাক্রান্ত হলেও পার্টির সিদ্ধান্ত সবাই শ্রদ্ধাভরে মেনে নেবে।

আউয়াল বলেন, ‘একযুগ ধরে নেতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। অর্থ নেই, এই অর্থের যে চরম সংকট তা জনগণের অফুরন্ত শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় উড়ে যাবে।’

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরিফুল আলম কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি। আমাদের মনে কষ্ট রয়েছে, চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। মামলা-হামলায় জর্জরিত। মনের কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তিত করে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছি।’

আপনার আসনে এবারের নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জ। ভোটের মাঠে জনগণের কাছে যেতে পারলে, ভোটাররা ঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে, আর যে নিরপেক্ষতার কথা বলছে, সেটা যদি বজায় থাকে তাহলে ভালো, যদি অন্যভাবে কিছু করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তো ভিন্ন কথা।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, ‘দলের নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। তবে আমাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে না থাকলে এতক্ষণে পার্টি অফিসে নেতাকর্মীদের সয়লাব হয়ে যেত। দেশনায়ক তারেক রহমান দেশে নেই, সুতরাং আমাদের কারোর মন ভালো নেই।’

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দফতর সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘আমাদের মনে কষ্ট রয়েছে। সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাচন হলে সেটা একটা অর্থবহ নির্বাচন হতো। দেশের মানুষের প্রত্যাশা একটা অর্থবহ নির্বাচন।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, ‘নেতাদের মনে কষ্ট রয়েছে, অর্থকষ্ট রয়েছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনে জয়ী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে আন্দোলন সফল হবে।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন না বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।

অপরদিকে দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় এবার কে প্রথম মনোনয়নপত্রটি গ্রহণ করবেন তা জানা যায়নি। প্রতিবার প্রথম মনোনয়নপত্রটি খালেদা জিয়া গ্রহণ করতেন।

রোববার সন্ধ্যায় বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, এখনও জানি না, কে দলের প্রথম মনোনয়নপত্রটি সংগ্রহ করবেন।’

এর আগে এদিন বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রির ঘোষণা দেয় বিএনপি। ঘোষণার পর এই কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের তেমন সমাগম দেখা যায়নি।

কেএইচ/জেডএ/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।