মানুষের ভালোবাসা আর প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি নিয়েই আমার রাজনীতি
আবু নাসের। সহ-সম্পাদক, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। টাঙ্গাইল জেলা ও কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। পরিচালক, এফবিসিসিআই। রাষ্ট্রায়ত্ত সিআইপি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে আসছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকেও মনোনয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই তরুণ নেতা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু
জাগো নিউজ : নৌকা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে অংশ নিতে জনসংযোগ চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
আবু নাসের : ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক কারণে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং শাহজাহান সিরাজের মতো জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব এ আসন থেকে পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী সংসদে দাঁড়িয়ে যখন আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন থেকেই দলের হয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে প্রচারণা চালাতে থাকি। কিন্তু তিনি ২০১৪ সালে ফের নির্বাচনে অংশ নেন। আমি মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও ওই সময় নৌকার বিজয়ের জন্য ঘরে ঘরে গিয়েছি।
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার পর তার সংসদ পদ বাতিল হয়ে যায়। এরপর উপ-নির্বাচন হয়। এলাকার মানুষের প্রত্যাশা ছিল দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু পাইনি। তবে মনোনয়ন না পেলেও আমি তখন আশাহত হইনি। মনোবল বাড়িয়ে গণমানুষের কাছে যাবার চেষ্টা করেছি।
জাগো নিউজ : আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর রাজনীতি কাছ থেকে দেখেছেন। উপ-নির্বাচনে হোসেল হাজারী বিজয়ী হন। তার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
আবু নাসের : এ ব্যাপারে দল মূল্যায়ন করবে। তবে বর্তমান সাংসদের কর্মকাণ্ডে তৃণমূলের ক্ষোভ আছে, এটি অস্বীকার করার কারণ নেই। বয়স, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়েই মানুষের মন জয় করতে হয়। দলীয় নেতা হলেও বলতে দ্বিধা নেই, সোহেল হাজারী মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জাগো নিউজ : সাংসদ সোহেল হাজারীর ব্যর্থতায় আপনার মনোনয়নের দ্বার উন্মোচিত করতে পারে বলে মনে করছেন?
আবু নাসের : অনেকটা তাই। মানুষের আবেগ বুঝে রাজনীতি করতে হয়। আমি গণমানুষের আবেগ ধারণ রাখতে সক্ষম হয়েছি।
দলীয় সভানেত্রী প্রত্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর ব্যাপারে খবর রাখছেন। বিভিন্ন উৎস থেকে তিনি তথ্য সংগ্রহ করেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং তৃণমূলের সমর্থন দেখেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
আমি মনে করি, তৃণমূল মানুষের ভালোবাসা থেকেই এবার মনোনয়ন পাওয়ার অধিকার রাখি।মানুষের ভালোবাসা আর প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি নিয়েই আমার রাজনীতি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতও আমার পক্ষে থাকবে বলে মনে করি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার একমাত্র এখতিয়ার দলীয় প্রধানের।
জাগো নিউজ : বর্তমান সাংসদের অবস্থানও এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে নেবেন?
আবু নাসের : রাজনীতির মাঠে চ্যালেঞ্জ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে মানুষের ভালোবাসাই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, যা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সহায়ক হবে।
গণমানুষ যদি কোনো নেতার পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেও কোনো লাভ হয় না। আমি একজন ‘প্রতীকী’ মানুষ। দল এবং জনগণই সব।
জাগো নিউজ : নির্বাচনে আপনার পক্ষে বিশেষ কোনো ‘ফ্যাক্টর’ কাজ করবে কীনা?
আবু নাসের : আমার বাড়ি কালিহাতীর অনগ্রসর একটি এলাকায়। ভৌগোলিকভাবে কালিহাতী পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা একটি এলাকা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমার নিকটবর্তী এলাকার কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। শাহজাহান সিরাজ এবং লতিফ সিদ্দিকীর বাড়ি উপজেলার একপাশে এবং প্রায় পাশাপাশি। যমুনা নদী বিধৌত চর এলাকার মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবার তাদের কাছের একজন মানুষকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। এটিই আমার জন্য বিশেষ আশীর্বাদ বলে মনে করি। এটি এখন কালিহাতীর মানুষের গণদাবি।
জাগো নিউজ : আর কোনো ফ্যাক্টর?
আবু নাসের : ঐতিহাসিক কারণে কালিহাতী রাজনীতির একটি উর্বর ক্ষেত্র। এখানে স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজের মতো বরেণ্য ব্যক্তির জন্ম। এ কারণে কালিহাতীর মানুষ তাদের উত্তরসূরি হিসেবে একজন যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজছেন, যিনি কালিহাতীর ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারবেন। এই বিবেচনায়ও আমি মানুষের সমর্থন পাচ্ছি। এই উপলব্ধি আমার মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেই।
দলের নেতাকর্মীরা অভূতপূর্ব সমর্থন জুগিয়ে আসছে আমাকে। এলাকায় কোথাও আমি দাঁড়ালে মিছিলে রূপ নেয়। কোথাও বসলে সমাবেশে রূপ নেয়। কালিহাতীর শিক্ষিত তরুণরা নিজ দায়িত্বে আমার হয়ে মাঠে নেমেছেন। এই ভালোবাসা থেকে আমি আশাবাদী যে, প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি দিলে অবশ্যই বিজয় নিশ্চিত করতে পারবো।
জাগো নিউজ : ক্ষমতাসীন দলে নিজেদের আগুনে ঘর পোড়ে। দলীয় কোন্দল আপনার আত্মবিশ্বাস অনিশ্চিত করে দেবে কীনা?
আবু নাসের : একাধিক প্রার্থী আছেন আমার এলাকায়ও। কোন্দলও আছে, তবে তা বর্তমান সাংসদকে ঘিরেই। অন্যরা সবাই দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেই রাজনীতি করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারুণ্যের প্রাণ ভোমরা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের নতুন পরিচয় মিলেছে। আমরা এখন উন্নত বিশ্বকেও চ্যালেঞ্জ করতে শিখেছি। চালের দাম নিয়ে মানুষ আর ভাবে না, ভাবতে চায় ইন্টারনেটের বিল নিয়ে। নয়া বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনা একসূত্রে গাথা। মানুষ এখন উন্নয়নের পক্ষে। তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের স্বনির্ভর হতে শক্তি জুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে সারথি হতে তরুণরা বদ্ধপরিকর। রক্তের রাজনীতি যুব সমাজ আর বিশ্বাস করে না। এ কারণে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে বিজয়ী করতে মানুষ একাট্টা। জীবনের অর্থ খুঁজতেই মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব চায়। শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি রক্ষা করতে সাধারণ মানুষও মরিয়া।
প্রধানমন্ত্রীও গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অধিক সজাগ বলে আমরা জানতে পারছি নানাভাবেই। মানুষ বা দলবিচ্ছিন্ন কোনো এমপি বা নেতাকে মনোনয়ন না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সভানেত্রী নিজেই।
জাগো নিউজ : ৭০ এর অধিক এমপি নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন এবার। এমন হিসেব আপনার জন্য আশীর্বাদ জানছেন কীনা?
আবু নাসের : প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। তিনি মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম ক্ষমতা ধারণ করেন। যেসব বিবেচনায় নতুন মুখ আসতে পারে, তাতে আমি আশাবাদী বটেই।
প্রধানমন্ত্রীর হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ এবং তিনিই ভালো জানেন কারা তার উন্নয়নের সড়কে সহায়ক হতে পারবেন। তার কোনো বিকল্প বাংলাদেশে দ্বিতীয়জন আর হতে পারে না। রূপকথার গল্প নয়, প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে বহু দেশ ঘুরে স্বচক্ষে দেখেছি। বিশ্ব নেতারা কিভাবে তাকে কুর্নিশ করেছেন, তা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
এ কারণেই আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, তারা চাই সমস্ত দ্বন্দ্ব পায়ে মাড়িয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসুক।
জাগো নিউজ : যদি মনোনয়ন না পান, তাহলে আপনার অবস্থান কী হবে?
আবু নাসের : মনোনয়ন পাবই, এমন মানসিকতা নিয়ে আমি রাজনীতি করি না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতি বোঝার চেষ্টা করি। তার কাছ থেকে শিখছি। তার ভাবনা এবং কমিটমেন্টের সঙ্গে যায় এমন কাউকে মনোনয়ন দিলে আমরা তার জন্য এক হয়ে কাজ করব।
আমরা চাই যারা শেখ হাসিনার রাজনীতি করেন, তারাই মনোনয়ন পাক। কোনো ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যেন কাউকে মনোনয়ন না দেয়া হয় এবং এবারে আরও সচেতন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। যদি সূক্ষ্ম বিবেচনার মাধ্যমে ৩শ’ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের সকল দল এক হলেও নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
শেখ হাসিনার বাইরে আর কেউ অপরিহার্য নয়। আমরা দলের জন্য নিবেদিত হতে পারি, কিন্তু অপরিহার্য নয়। সুতরাং শেখ হাসিনা ৩শ’ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করলেও সমস্যা হবে না বলে বিশ্বাস করি। কারণ, শেখ হাসিনার ইমেজ-ই এমপিদের ভরসা।
জাগো নিউজ : রাজনীতির পট পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিক্ষণে। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসলে আপনার আসনে ফলাফল কী হতে পারে বলে মনে করেন?
আবু নাসের : নির্বাচন ঘিরে আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনার আড়ালে ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। ইতিপূর্বে আমরা রাজনীতির নামে অনেক ষড়যন্ত্র দেখেছি। এখনো দেখছি।
ষড়যন্ত্র থেমে আছে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। ষড়যন্ত্রের মাঠে অতি অল্প সময়ের মধ্যেও ফল পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়রাও এখন শক্তভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখেন। শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শিকড় এখন শক্ত। চাইলেই কেউ উপড়ে ফেলতে পারবে না।
বিএনপি এখন কোমরভাঙা দল। বিএনপি যেমন আন্দোলন করার শক্তি হারিয়ে ফেলছে, তেমনি ৩শ’ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কী-না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। সুতরাং এই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরির শক্তি রাখে বলে মনে করি না।
সকল প্রকার ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবে বলে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
এএসএস/এমআরএম/আরআইপি