ক্ষুদ্র ব্যবসার লাইসেন্সে স্পা সেন্টার, অতঃপর…
সিটি কর্পোরেশন থেকে ‘ক্ষুদ্র ব্যবসার’ লাইসেন্স নিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানীতে চলছে মাদক ও দেহব্যবসা। তরুণীদের দিয়ে গ্রাহকদের স্পা করানোর হয়। ওই সময়ের ছবি ধারণ করে পরবর্তীতে চলে ব্ল্যাকমেইল।
সম্প্রতি গুলশান ও বনানী এলাকায় এ ধরনের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে মোট ৫৩ জনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ। তাদের আটকের পর ঢাকার অভিজাত এ এলাকার অন্ধকার ব্যবসার খবর জানা যায়।
এক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে গুলশান-বনানী এলাকা গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়। ডিবির অনুসন্ধানে উঠে আসে, সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কতিপয় প্রতারক চক্রের সদস্য। প্রতিষ্ঠানগুলো কী ব্যবসা করবে কিংবা লাইসেন্স নেয়ার পর কী ধরনের ব্যবসা করছে, তা যাচাই-বাছাই করছে না সিটি কর্পোরেশন। এ সুযোগে স্পা, ফিটনেস ও থেরাপি সেন্টার খুলে এর আড়ালে চালানো হয় রমরমা মাদক ও দেহব্যবসা।
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পর চলতি বছরের ১৮ আগস্ট বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে আটক করা হয়। ‘পতিতাবৃত্তি’ ও ‘দাসত্বে’ বাধ্য করায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ এর আওতায় তাদের আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সম্প্রতি গুলশান এলাকার ডব্লিউ বিউটি অ্যান্ড স্পা, মহাখালী ডিওএইচএসের ফনিক্স হেলথ কেয়ার, গুলশানের হোয়াইট বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা সেন্টার এবং ডায়মন্ড বিউটি অ্যান্ড স্পায় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে আটক করে ডিবি।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, গুলশান ও বনানী এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক স্পা ও থেরাপি সেন্টার রয়েছে। এর আড়ালে চলছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয় থানা পুলিশ ও প্রভাবশালী কয়েকজনের মদদে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান।
গুলশানের একটি স্পা সেলুনে সার্ভিস নিতে গিয়ে ব্ল্যাকমেইলের শিকার ব্যবসায়ী আতাউর রহমান (ছদ্মনাম) জাগো নিউজকে বলেন, ‘শরীর ম্যাসেজ করানোর সময় আমাকে না জানিয়ে আপত্তিকর ছবি ধারণ করা হয়। এর কয়েক দিন পর আমাকে ফোনে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। পাঁচ লাখ টাকা না দিলে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে আমি টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করি এবং পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করি।’
ডিবির তদন্তে জানা গেছে, গুলশান এলাকার হোয়াইট বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা তাদের ব্যবসার আড়ালে দেহ ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নয়ন ও রিয়া দম্পতি। শুধু গুলশানেই রয়েছে তাদের তিনটি প্রতিষ্ঠান।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, রিয়া গুলশান এলাকার শীর্ষ নারী পাচারকারী ও মাদক ব্যবসায়ী। যিনি বডি ম্যাসাজের নামে দেহব্যবসা ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৬ জুন গুলশান থানায় এবং ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বরাবর একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রিয়া বর্তমানে পলাতক।
আরও পড়ুন >> লাইসেন্স ছাড়াই চলছে অর্ধশতাধিক বার
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিজাত এলাকায় স্পা ও থেরাপি সেন্টারের নামে প্রতিষ্ঠান খুলে নানা অপরাধ ও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। একটি সভ্য সমাজে ব্যবসার আড়ালে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলতে পারে না।’
গুলশানে অবৈধ এসব ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সবসময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’
এআর/এনডিএস/জেআইএম