এবার রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৮ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তিন কোটি ৬২ লাখ ৭৯ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী আমাদের খাদ্যের চাহিদা রয়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ টন। সেই হিসাবে এবার উদ্বৃত্ত চাল রয়েছে ৭১ লাখ ৭৯ হাজার টন। স্বাধীনতার পর এতো চাল আর কখনও উৎপাদন হয়নি।

২০১৮ সালে দেশে গম উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার টন, ভুট্টা ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার, আলু এক কোটি তিন লাখ ১৭ হাজার, ডাল ১০ লাখ ৩১ হাজার, তেলবীজ নয় লাখ ৭০ হাজার ও শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৫৯ লাখ ৫৪ হাজার টন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ফসলের উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার কোটি সাত লাখ ১৪ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছে চার কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার টন। ফলে দানাদার খাদ্যে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ।

২০০৬ সালে দেশে দানাদার খাদ্যের উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৬১ লাখ ৩৩ হাজার টন।

উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, এক ও দুই ফসলি জমিগুলো অঞ্চল বিশেষে প্রায় চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ২১৬ ভাগ। ২০০৬ সালে নিবিড়তা ছিল ১৮০ ভাগ। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্ন সহনশীলতা ও জিংক সমৃদ্ধ ধানসহ এখন পর্যন্ত ১০৮টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে। ফলে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ধানসহ কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বর্তমান সরকার সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে আর্থিক সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৬৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার আর্থিক সহযোগিতার মধ্যে শুধু সারের পেছনে কৃষককে ৫৮ হাজার ৯০৪ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান উৎপাদনমুখী ও কৃষিবান্ধব সরকার নানাবিধ সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে মোট দুই কোটি আট লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করেছে। সরকারের এসব উদ্যোগের কারণে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি একটি লেখায় উল্লেখ করেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খাদ্যের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে দুই কোটি ৯১ লাখ টন। মাথাপিছু ১৫ কেজির হিসাব ধরে খাদ্যের বার্ষিক এ চাহিদা নির্ণয় হয়। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৪ লাখ ধরে বার্ষিক এ চাহিদা দাঁড়ায় দুই কোটি ৫৩ লাখ টন। এর সঙ্গে মোট উৎপাদনের ১৫ ভাগ বীজ, অপচয় ও পশুখাদ্য হিসাবে ধরলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খাদ্যের বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় দুই কোটি ৯১ লাখ টন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অপর এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য (চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন হয়েছে ৩৮৮ দশমিক ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ৩৩৮ দশমিক ১৩ লাখ টন, গম ১৪ দশমিক ২৩ লাখ টন এবং ভুট্টা ৩৫ দশমিক ৭৮ লাখ টন।

এছাড়া সবজি ১৬০ দশমিক ৪২ লাখ টন, আলু ১১৩ দশমিক ৩২ লাখ টন, ডাল জাতীয় ফসল ১০ দশমিক ২৬ লাখ টন, তৈল জাতীয় ফসল ১০ দশমিক ৫৮ লাখ টন এবং মসলা জাতীয় ফসল ৩৫ দশমিক ৬০ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে।

এফএইচএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।