প্রতি বছর কলাকুশলীদের পুরস্কার দেবে বিটিভি

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪০ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভির কলাকুশলীদের প্রতিবছর ২৩টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হবে। এজন্য সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কার নীতিমালা ২০১৮’ জারি করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, পুরস্কার দিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাছাই কমিটি থাকবে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।

পুরস্কার দেয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নীতিমালায় বলা হয়, বিটিভি ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ঢাকা শহরের ডিআইটি ভবনের নিচতলায় এনইসির (নিপ্পন ইলেকট্রিক কোম্পানি, জাপান) সহায়তায় আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ টেলিভিশন একটি সরকারি গণমাধ্যমে রূপান্তরিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করে ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ডিআইটির ক্ষুদ্র পরিষদ থেকে রামপুরা বৃহত্তর ও বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও বহুমাত্রিক টিভি কনটেন্ট তৈরি এবং সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে তথ্য প্রদান, উন্নয়নে উদ্বুদ্ধকরণ, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতির চর্চা ও লালনের মাধ্যমে জনরুচি উন্নয়ন ও জনমনে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন; পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং জীবন-জীবিকা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে গণসচেতনতা ও জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে থাকে।

এতে আরও বলা হয়, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ একটি সৃজনশীল কাজ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সরকারি গণমাধ্যমের উত্তরোত্তর মানোন্নয়নের জন্য এর অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করার জন্য তাদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন। সে জন্য তাদের পুরস্কার দিতে এ নীতিমালা করা হয়েছে।

বিটিভির উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) সুরথ কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বিটিভির কলাকুশলীদের পুরস্কারের প্রচলন করা হয়েছে। আশা করি এর মাধ্যমে বিটিভিতে কর্মরতরা আরও অনুপ্রাণিত হবেন। এর মাধ্যমে তাদের রেটিং নির্ধারণ হবে।’

তিনি বলেন, ‘সবাই তো তার অফিসে সবচেয়ে স্মার্ট অফিসার হয়ে থাকতে চায়। সেটা বেতন বেশি না হলেও সবাই চায়। এ ব্যবস্থায় সেটা নির্ধারণ করা যাবে। এতে বিটিভির আরও মানোন্নয়ন হবে।’

নীতিমালা অনুযায়ী, আপাতত সব পুরস্কারপ্রাপ্ত কলাকুশলীকে একটি রেপ্লিকা ও সনদপত্র দেয়া হবে।

এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘পুরস্কার প্রদান নীতিমালার খসড়ায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের জন্য অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে নানা বিষয় চিন্তা করে তা বাদ দেয়া হয়। তবে আগামীতে নীতিমালা সংশোধন করে পুরস্কারপ্রাপ্তদের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা হবে।’

যেসব ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হবে

পুরস্কারের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ প্রযোজক (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বা ডকুমেন্টারি), শ্রেষ্ঠ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, শ্রেষ্ঠ গ্রাফিক্স ডিজাইনার, শ্রেষ্ঠ ক্যামেরাম্যান (অনুষ্ঠান ও নাটক), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ প্রযোজক (সংবাদ), শ্রেষ্ঠ ক্যামেরাম্যান (সংবাদ), শ্রেষ্ঠ প্রযোজক (নাটক), শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী (নারী), শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী (পুরুষ), শ্রেষ্ঠ উপস্থাপক, শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ অনুষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী।

যে প্রক্রিয়ায় দেয়া হবে পুরস্কার

পুরস্কার দিতে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রতি বছর বাছাই কমিটি গঠন করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে এ বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী, একজন বিশিষ্ট টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা, একজন বিশিষ্ট নাট্যকার, একজন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী, একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক, একজন বিশিষ্ট সংবাদ পাঠক, একজন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী, একজন বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ, তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (টিভি-১)। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঢাকা কেন্দ্র পুরস্কার বাছাই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

পুরস্কার বাছাই কমিটি একটি নির্দিষ্ট বছরে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান/টিভি কনটেন্ট দেখে সেই বছরের পুরস্কারের জন্য পুরস্কারের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কলাকুশলীদের নাম সুপারিশ করবে। বাছাই কমিটির পুরস্কারের জন্য অনুষ্ঠান আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরস্কার বিবেচনার জন্য অনুষ্ঠান জমা দেয়ার অনুরোধ জানাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠান জমা প্রাপ্তি বা সংগ্রহ করার পর কমিটি স্ক্রিনিং, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে বিবেচ্য বছরের পুরস্কারের জন্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করে তা তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

আজীবন সম্মাননা ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে প্রয়োজনীয় মনে হলে বাছাই কমিটি একাধিক ব্যক্তিকে পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারবে। কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য যথাযোগ্য মনে না করলে বাছাই কমিটি সেই ক্ষেত্রে সুপারিশ দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সুপারিশ না করার কারণ উল্লেখ করতে হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিজস্ব প্রযোজনায় একাধারে নির্মিত ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত যেকোনো অনুষ্ঠান পুরস্কারের আওতায় আসবে। আউটসোর্সিং বা প্যাকেজ নীতিমালার আওতায় বাইরে থেকে সংগ্রহীত অনুষ্ঠান পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে না। আজীবন সম্মাননা পুরস্কারের জন্য জীবিত ব্যক্তিদের বিবেচনা করতে হবে। পুরস্কারযোগ্য প্রতিটি শাখায় গুণগত ও শৈল্পিক মানে শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে। দেশীয় প্রেক্ষাপট, প্রযোজকের মৌলিকত্ব ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর বহনকারী অনুষ্ঠান পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পুরস্কারের জন্য বিবেচনার লক্ষ্যে বাছাই কমিটির কাছে জমা করা বা বাছাই কমিটি স্বপ্রণোদিত হয়ে বাছাই করা অনুষ্ঠানের প্রতিটি শাখার কলাকুশলীদের নাম উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন পুরস্কারের জন্য অংশগ্রহণকারী কোনো অনুষ্ঠানে বিটিভিতে প্রচার হয়নি এমন কোনো দৃশ্য সংযোজন করা যাবে না।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাইরে শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী (নারী), শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী (পুরুষ), শ্রেষ্ঠ উপস্থাপক, শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা পুরস্কারের আওতায় আসবেন।

আরএমএম/এনডিএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।