কাগজেও সিন্ডিকেট!
>> অজুহাত : আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি
>> উভয় সংকটে আমদানিকারকরা
>> বেকায়দায় প্রকাশক ও ভোক্তারা
আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে কাগজের দাম। এ সুযোগ নিয়েছেন দেশের মিলমালিক ও আমদানিকারকরা। কাগজের ডিলার ও পাইকারদের এতে সমস্যা না হলেও বেকায়দায় পড়েছেন প্রকাশক ও ভোক্তারা।
কাগজের দাম বাড়ায় ব্যয় বেড়েছে শিক্ষা উপকরণেও। ফলে চাপে পড়েছেন অভিভাবকরা। তবে দাম বাড়া যৌক্তিক বলে দাবি করছেন কাগজ উৎপাদনকারীরা।
সরকারের কোনো তদারকি না থাকায় দেশের কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় সরকারসহ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের মাধ্যমে এ খাতের উদ্যোক্তা থেকে আমদানিকারকদের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন- এমন শঙ্কা তাদের।
কাগজের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ডিলার, পাইকার ও প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে কাগজের দাম। মানভেদে কাগজের দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সব মিলমালিক এক হয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে কোনো সংস্থা না থাকায় ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ডিলার, পাইকার, প্রকাশক, সর্বোপরি সাধারণ ভোক্তারা।
কাগজের দাম বাড়ার বিষয়ে তাজ পেপার স্টোরের স্বত্বাধিকারী হামীম আহমাদ জাগো নিউজকে বলেন, চার থেকে পাঁচ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে কাগজের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়- উভয় বাজারেই কাগজের দাম বাড়তি। গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে প্রতি টন দেশি কাগজের দাম মানভেদে বেড়েছে ২০ থেকে ২৩ হাজার টাকা। চলতি বছরের এপ্রিলে যে কাগজের দাম টনপ্রতি ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও কাগজের দাম বেড়েছে। আগে যে কাগজ আমদানি করতে ৮৫০ থেকে ৯০০ মার্কিন ডলার লাগতো এখন সেখানে লাগছে ৯২০ থেকে এক হাজার ডলার।
তিনি বলেন, চীন, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশি কাগজ আমদানি হয়। এসব দেশে কাগজ উৎপাদনের মূল কাঁচামালের (পাল্প) দাম বেড়েছে। ফলে কাগজের দামও বাড়তি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সুযোগ নিয়েছেন দেশের মিলমালিকরা। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে দাম বাড়িয়েছেন। অর্থাৎ সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের এ সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো ক্ষমতা নেই।
এ কারণে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
কাগজের পাইকারি ব্যবসায়ী পেপার গ্যালারির স্বত্বাধিকারী মাহফুজুর রহমান বলেন, কয়েক মাস ধরে ধাপে ধাপে দাম বাড়ছে। সবগুলো মিল একসঙ্গে সমন্বয় করে এ দাম বাড়িয়েছে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
তিনি বলেন, বেশি দামে কেনার কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে দাম বাড়ায় পুঁজি খাটাতে হচ্ছে বেশি, ক্রেতাও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কাগজের ব্যবসা এখন মন্দা যাচ্ছে।
এদিকে কাগজের দাম বাড়ায় বই উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। ফলে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রকাশনা শিল্পে। এ বিষয়ে প্রকাশকদের সংগঠন একাডেমিক অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এসিপিএবি) সভাপতি ও সময় প্রকাশন’র সম্পাদক ফরিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাগজের দাম বাড়ার কারণে বই ছাপাতে খরচ বাড়ছে। ফলে বইয়ের দামও বাড়বে। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হবে পাঠক ধরে রাখা।’
‘বেশিরভাগ মানুষই এখন ফেসবুক ও ইন্টারনেটে আসক্ত। বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। নতুন করে দাম বাড়লে এ শিল্পে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে’- যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট সংস্থা নেই, তাই আমরা বিষয়টি সুরাহার জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে যাবো। আশা করছি একটি ফলপ্রসূ সমাধান হবে।
দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে কাগজের মূল উপাদান পাল্পের (মন্ড) দাম বেড়েছে। আমাদের পেপার ইন্ডাস্ট্রি পাল্প আমদানিনির্ভর। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বাধ্য হয়েই কাগজের দাম আমাদের বাড়াতে হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কাগজের দাম কম। পাশের দেশ ভারতে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দামে কাগজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। বলা যায়, বাংলাদেশে এখন কাগজের দাম সর্বনিম্ন। দাম কম বলেই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের উৎপাদিত কাগজের রফতানি বেড়েছে। অনেকে এখন আমাদের কাছ থেকে পেপার নিয়ে যাচ্ছেন।’
এসআই/এমএ/এমবিআর/এমএআর/আরআইপি