৫৬-তেই ৬০ পৃষ্ঠার খাতা!
কখনও শুনেছেন ৫৬-তে ৬০ হয়। না, সেটা কখনও সম্ভব নয়। কিন্তু বাজারে খাতা কিনতে গেলে ৫৬ পৃষ্ঠাকে ৬০ পৃষ্ঠা হিসেবেই মেনে নিতে হবে। এভাবেই চলছে জালিয়াতি, প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।
রাজধানীর নয়া বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বত্র বেড়েছে কাগজের দাম। স্বাভাবিকভাবে প্রভাব পড়েছে খাতার দামে। কিন্তু বাজার ধরে রাখতে অভিনব প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করছেন ব্যবসায়ীরা।
নয়া বাজারের শাহজাহান প্রোডাক্টসের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগে যে খাতায় ৬০ পৃষ্ঠা দেয়া হতো, এখন দেয়া হচ্ছে ৫৬ পৃষ্ঠা। ব্যবসায় টিকে থাকতে খাতায় পাতার সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে ৬০ পৃষ্ঠার এক ডজন খাতা বিক্রি করতাম ১২০ টাকায়। এখন বিক্রি করছি ১৩৫ টাকায়। কিন্তু বাস্তবে কাগজের দাম আরও বেশি বেড়েছে। এই দামে বিক্রি করে পোষানো যায় না। বাধ্য হয়ে ৫৬ পৃষ্ঠার খাতায় ৬০ পৃষ্ঠার সিল মেরে দেয়া হচ্ছে। তার মানে চার পৃষ্ঠা কম দেয়া হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকারভেদে খাতার দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। গত এপ্রিল মাস থেকে সব ধরনের কাগজের দাম বাড়তি। এর প্রভাব পড়েছে লেখার খাতার ওপরেও। লেখার সব ধরনের তৈরি খাতার দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। তবে দিস্তা কাগজের দাম তুলনামূলক কম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এক দিস্তা (সাধারণত ২৫ প্রস্থ কাগজ নিয়ে তৈরি হয় এক দিস্তা) কাগজের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। শতকরা হিসাবে এ দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ১০-১৫ শতাংশ।
নয়া বাজারের আহাম্মদীয়া পেপার হাউজের বিক্রেতা আজাদ বলেন, উৎপাদকদের সিন্ডিকেটের কারণে দেশে কাগজের দাম বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে, এই অজুহাতে তারা অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের ক্রেতা কমে গেছে। টিকে থাকতে হলে কিছুটা কৌশলী তো হতেই হবে।
বিভিন্ন স্টেশনারি ও লাইব্রেরিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্রেতারা দাম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট। দাম নিয়ে তারা নানা প্রশ্ন করছেন। ফলে বিক্রিও কমে গেছে।
আবির নামে মিরপুরের এক স্টেশনারি মালিক জানান, ক্রেতারা খাতা কেনার সময় পৃষ্ঠার সিল দেখে কেনেন। কখনও তারা খাতার পৃষ্ঠা গুনে দেখেন না। খাতা আমরা বানাই না। কিন্তু ক্রেতাদের ঠকাতে হচ্ছে ঠিকই। খাতার উৎপাদকরা যদি পৃষ্ঠা কম দেন, সেটা খুবই দুঃখজনক। এতে ব্যবসায় একটা নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে।
আমদানিকারক তাজ পেপার স্টোরের কর্ণধার হামীম আহাম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, আগে যে কাগজ আমদানি করা হতো টনপ্রতি ৬৫-৬৮ হাজার টাকায়, এখন সেটা করতে হয় ৯০-৯৫ হাজার টাকায়। মাত্র চার থেকে পাঁচ মাসের ব্যবধানে এভাবে দাম বেড়েছে।
একই তথ্য জানান কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের উপ-ব্যবস্থপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ব বাজারে কাগজ তৈরির মূল উপাদান পাল্পের দাম ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের পেপার ইন্ডাস্ট্রি এখন আমদানি নির্ভর। এজন্য বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কাগজের দাম কম। পাশের দেশ ভারতে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দামে কাগজ বিক্রি হচ্ছে। অন্য দেশেও একই অবস্থা। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এখন কাগজের দাম সর্বনিম্ন। দাম কম বলেই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের রফতানি বেড়েছে। অনেকে এখন আমাদের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে যাচ্ছে। ফলে রফতানিও হচ্ছে বেশ।
জানা গেছে, দূষণবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে চীন এক হাজারেরও বেশি পেপার মিল বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া দেশটি মন্ড তৈরিতে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত কাগজ আমদানিও নিষিদ্ধ করেছে। ফলে সেখানে কাগজ উৎপাদন কমছে।
অন্যদিকে ভারতেও চলতি বছরে কাগজ উৎপাদন কমেছে ২৫ লাখ টন। তারা রফতানির পরিবর্তে বর্তমানে কাগজ আমদানি করছে। অন্যান্য সার্ক দেশের মধ্যে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার তাদের প্রয়োজনীয় কাগজের শতভাগই আমদানি করে। পাকিস্তানও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাগজ আমদানি করে। চীনসহ কয়েকটি দেশে মন্ড উৎপাদন কমিয়ে দেয়ায় বিশ্ব বাজারে বাড়ছে কাগজের দাম। যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও।
এমএ/এসআই/এএসএস/এমএআর/পিআর