শহিদুল আলমের মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০১৮

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো ও স্থিতিশীল বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই চিকিৎসকের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে কারাগারে থাকা শহিদুল আলমের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়ার জন্য হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ মোতাবেক একটি প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে দাখিল করা হয়। জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শহিদুল আলমের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

এর আগে এ সংক্রান্ত রিট নিষ্পত্তি করে ৯ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শহিদুল আলমের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৩ আগস্টের মধ্যে সিএমএম আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১২ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন মানসিক চিকিৎসকের স্বাক্ষর রয়েছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর জিন্নাহ শামসুন্নাহান এবং শারীরিক ওষুধ এবং পুনর্বাসন বিভাগের ড. মো. মুনিরুজ্জামান খান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অনুযায়ী ড. শহীদুল আলমের (৬৩) মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো ও স্থিতিশীল। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ভিআইপি কেবিন (ডিলাক্স) ৫১২ নম্বর, শাহবাগ উল্লেখ রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শহিদুল আলমের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দুই সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। তার (শহীদুল আলম) উপস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ করেছে বোর্ড।

sahidul-alam-01

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদুল আলম

এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়া জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতারের আগে তো তিনি অসুস্থ ছিলেন না। কারাগারে তার নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যা আগে কখনও ছিল না। এ কারণে তার দ্রুত চিকিত্‍সার প্রয়োজন বলে আদালতের নিদের্শনা চেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা- তারও তথ্য প্রতিবেদন আকারে আদালতে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।

‘কিন্তু কী করা হলো, তার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন দেয়া হলো। আমরা চাইলাম কী, আর দেয়া হলো কী!’

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ূয়া আরও বলেন, ৫ আগস্ট রাতে আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েক দিনের জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। পরবর্তীতে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ৬৩ বছর বয়সী আলমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। শ্বাসকষ্ট এবং শরীরের নানা স্থানে ব্যথা অনুভব করেন। শহিদুল আলম আদালতে নিজেই বলেছিলেন যে, তাকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে। কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। মানসিকভাবে শক্ত থাকলেও তাকে দেখে তেমন সুস্থ মনে হয়নি। তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো সঠিকভাবে আসেনি- যোগ করেন তিনি।

গত ৭ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ শহিদুল আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর এবং সেখানে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেন। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ৯ আগস্টের মধ্যে সেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

এরপর শহিদুল আলমকে ৮ আগস্ট সকাল পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে ফেরত পাঠানো হয়।

sahidul-alam-02

পুলিশের কাঁধে ভর করে আদালতে উপস্থিত হন শহিদুল আলম

৯ আগস্ট শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, শহিদুল আলমের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ভালো। সে সময় রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন আদালতে বলেন, ‘এখানে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর আলোকে শহিদুল আলমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি।’ এরপর হাইকোর্ট শহিদুল আলমের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।

গত ৫ আগস্ট রাতে আটকের পর আইসিটি আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর শহিদুল আলমের রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে তার স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটে শহিদুল আলমকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজত থেকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ভুল তথ্য প্রচার করে জনমনে ভীতি সঞ্চার এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিতের অভিযোগ আনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে সম্প্রতি সংঘটিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে একাধিকবার ফেসবুক লাইভে আসেন এবং বিদেশি টেলিভিশন আল জাজিরাকেও ওই বিক্ষোভ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন।

এরই মধ্যে শহিদুল আলমের সমর্থনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, নোয়াম চমস্কি, অরুন্ধতী রায়সহ খ্যাতিমান একাধিক লেখক-বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দেন। পেন ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠনও তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।

সর্বশেষ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা টিউলিপ সিদ্দিক। গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য টাইমস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার যথার্থ বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তার দাবি, গত মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ চলাকালে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছিলেন তিনি।

এফএইচ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।