লাইসেন্স থাকা দোষের, না থাকলে ‘পোয়াবারো’ পুলিশের!
ক’দিন আগেও কি দেশের জনগণ বিষয়টি জানতেন? ভিআইপি-সিআইপিদের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিয়ে আমজনতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকা থাকতেন, তাদেরই বিলাসবহুল গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই, চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স!
বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো স্কুল-কলেজপুড়য়া শিক্ষার্থীরা। গত দু’দিনের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভিআইপি-সিআইপিদের ব্যবহৃত শতকরা ৮০ ভাগ গাড়িরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, গাড়ির চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্সও। অথচ তারাই ‘অবৈধভাবে’ দাপিয়ে বেড়ান সারাদেশজুড়ে।
দেশের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা যখন লাইসেন্সবিহীন গাড়িতে চড়েন, তখন সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরাও ‘লাইসেন্স থাকাটা ভালোভাবে নেবেন না’- এটাই স্বাভাবিক!
আরও পড়ুন >> অনিয়মের শহরে নিয়ম মানতে ‘হুড়োহুড়ি’
চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটের গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইসেন্স থাকার চাইতে না থাকাটাই ভালো তাদের জন্য। কারণ, যেসব চালকের লাইসেন্স নেই বা গাড়ির কাগজপত্রে সমস্যা আছে তাদের নির্দিষ্ট ‘টোকেন’র বিনিময়ে মাসে একবার চাঁদা দিলেই হতো। কিন্তু যাদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে, তাদের চেক করার নামে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে মামলা দেয়, হয়রানি করে। যেন গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেই তাদের সমস্যা!
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করেন সিএনজি অটোরিকশাচালক অলি আহমদ। তিনি জানান, লাইসেন্স না থাকলে একবার, থাকলে বারবার হয়রানির শিকার হতে হয়। এ রুটে গাড়ি চালাতে গেলে প্রতি মাসে একজন চালককে অন্তত ৯০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ চাঁদার হার কোথাও দৈনিক আবার কোথাও মাসিক। চাঁদার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা টোকেন। এসব টোকেন সরবরাহ করে শ্রমিকনেতা নামধারী এক শ্রেণির দালালরা। তারাই টোকেন বিকিকিনির কাজ করেন। এছাড়া পুলিশের ডিউটির নামে হয়রানি তো আছেই।
অলি আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম আসতে একটি সিএনজি অটোরিকশাকে তিন জায়গায় আলাদা আলাদা চাঁদা দিতে হয়। প্রতি মাসের শুরুতে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের ঠিক করা দালালদের চাঁদা দিয়েই সংগ্রহ করতে হয় নির্দিষ্ট টোকেন। এক্ষেত্রে রাঙামাটি শহর থেকে বের হতে প্রয়োজন হয় ৩৫০ টাকার টোকেন, বেতবুনিয়ার রাউজান হাইওয়ে পুলিশকে দিতে হয় ২০০ টাকা এবং ৩৫০ টাকা দিয়ে টোকেন সংগ্রহ করতে হয় চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেনে।
এছাড়া গাড়ির নম্বর না থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না যদি ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি টোকেন সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু যত সমস্যা হয় লাইসেন্স থাকলেই। যাদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে, তাদের চেক করার নামে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে পুলিশ। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে মামলা দেয়। তাই এখন চালকরা আর ঠিক মতো কাগজপত্র না রেখে টোকেনেই চলছেন।’
চালকদের অভিযোগ, শুধু চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক নয়, চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলার অন্তত নয়টি রুটে প্রতিদিন চলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজি হচ্ছে স্থানীয় পরিবহন নেতাদের যোগসাজসে, থানা ও হাইওয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ‘টোকেন বাণিজ্যে’র নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে নোয়াপাড়া, রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই; অক্সিজেন থেকে রাঙামাটি, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট ও হাটহাজারী; কালুরঘাট থেকে বোয়ালখালী ও পটিয়া; শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশ থেকে বাঁশখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ রুটে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশ চালক ও গাড়ির সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র নেই।
আরও পড়ুন >> ঢাকার রাস্তায় আজও নামেনি বাস
শ্রমিক নেতারা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে লিঁয়াজো করে মাসিক মাসোহারার ভিত্তিতে চলছে এসব গাড়ি। এজন্য নিতে হয় নির্দিষ্ট টোকেন। ওই টোকেন বিক্রির টাকার একটি অংশ যায় পুলিশের পকেটে। তবে সবচেয়ে বড় অংশটি পান তথাকথিত শ্রমিক নেতারা। এসব টোকেন বিক্রি ও চাঁদা আদায়ে গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা লাঠিয়াল বাহিনী।
নগরীর প্রবেশপথগুলোতে টোকেন বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এবং বাকলিয়া থানার চাকতাই নতুন ব্রিজ মোড়- এ তিন স্পটের টোকেন না নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করতে পারে না কোনো গাড়ি।
একাধিক চালক জানান, টোকেন ছাড়া প্রবেশ করলে পড়তে হয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক নামধারী চাঁদাবাজদের হাতে। অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি জব্দ করে তুলে দেয়া হয় পুলিশের কাছে। আর পুলিশ ওই গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মোটা অংকের জরিমানা করে। তাই বাধ্য হয়ে প্রতি মাসে চারশ থেকে ৯০০ টাকার বিনিময়ে টোকেন সংগ্রহ করেন চালকরা।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এসব টোকেন দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে। রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম আসার জন্য নিতে হয় রাউজান হাইওয়ে পুলিশের টোকেন। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষে এ টোকেন বাণিজ্য পরিচালনা করেন রাঙামাটির ঘাগড়া এলাকার সিএনজি অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীর। মাসিক প্রতিটি টোকেনের মূল্য আড়াইশ থেকে চারশ টাকা। কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় টোকেন দেয়া হচ্ছে ‘চট্টগ্রাম জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন’র নামে। অভিযোগ আছে, এ এলাকার টোকেন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে হোসেন, রহিম ও সাহেদ সিন্ডিকেট।
বাকলিয়া থানার চাকতাই নতুন ব্রিজ এলাকার টোকেন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে জসিম নামে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। তাকে সহায়তা করেন মইজ্জার টেকে ইউসুপ, আনোয়ারা, চাতরী ও চৌমহনীতে নুরুল আলম, বাঁশখালীর খোকনসহ আরও অনেকে।
এছাড়া শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে হারুনুর রশিদ নামে এক পরিবহন নেতা টোকেন বাণিজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পুলিশ ও শ্রমিক নেতাদের টোকেন বাণিজ্য নিয়ে চালকরা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে চান না। তবে সম্প্রতি নিয়মিত টোকেন সংগ্রহ করে সিএনজি অটোরিকশা চালান এমন একজনের সঙ্গে কথা বলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চালক বলেন, অক্সিজেন থেকে গাড়িগুলো কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় গেলে পুলিশ ধরে। আবার কাপ্তাই রাস্তার মাথার গাড়িগুলো অক্সিজেনে ঢুকতে চাইলে পারবে না। এ ধরনের বেশ কিছু স্পট আছে, যা পার হতে গেলে টোকেন নিতে হয়। হাটহাজারী থেকে এয়ারপোর্ট যেতে আড়াইশ টাকার টোকেন লাগে। পুরো রাস্তাজুড়ে পুলিশ থাকলেও কেউ ধরে না।
টোকেনগুলো কোথায় পান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সার্জেন্ট ও টিআইরা টোকেন বিক্রি করেন। পরিচিত হলে সরাসরি টোকেন সংগ্রহ করা যায়। নয়তো দালালের মাধ্যমে টোকেন বিক্রি করে পুলিশ।’
তিনি জানান, ডিউটি করানোর কথা বলেও পুলিশ চাঁদাবাজি করে। কাগজপত্র সব ঠিক থাকলে ডিউটির জন্য গাড়ি দিতে হয়। গাড়ি আটকে বলে, ডিউটি করতে হবে। যদি দু-একশ টাকা দেয়া হয়, তাহলে গাড়ি ছেড়ে দেয়। আর ডিউটি করতে হয় না।
শুক্রবার (০৩ আগস্ট) নগরের জিইসি মোড়, বারিক বিল্ডিং, সিটি গেট, নয়াবাজার, সিমেন্ট ক্রসিং, নতুন ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের হয়ে চাঁদা তোলা সাদা পোশাকের মানুষদের ‘টেন্ডল’ নামে চেনেন চালকরা।
কয়েকজন বাস ও সিএনজি চালকের সঙ্গে কথা বলে এ ধরনের বেশ কয়েকজন টেন্ডলের নাম পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে সক্রিয় থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেন নগরের ২ নম্বর গেটে রহিম ও কামাল, অলঙ্কার মোড়ে জসিম ও আমীর, সিটি গেটে আনোয়ার, নয়াবাজারে সোহেল, সিমেন্ট ক্রসিংয়ে আফসার ও আকতার, বারিক বিল্ডিংয়ে শাহেদ ও সাহাবুদ্দিন, নতুন ব্রিজে রফিক ও হৃদয়, চাক্তাই চাসড়ার গুদাম এলাকায় সুমন ওরফে লম্বা সুমন, সল্টগোলা ক্রসিংয়ে জহির ও জাবেদ এবং জিইসি মোড়ের দুলাল।
আরও পড়ুন >> ‘বন্ধুর রক্তের দায় মেটাতে রাস্তায় নেমেছি’
পরিবহন খাতের এ অনিয়মের জন্য পুলিশ ও পরিবহন নেতারা দুষছেন একে-অপরকে।
নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার পরিবহন নেতা রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাড়ি থেকে আমরা যে টাকা চাঁদা হিসেবে নেই, তার বড় একটি অংশ পুলিশকে দিতে হয়। সরকার রাজস্ব আদায়ের জন্য গাড়ির কাগজপত্র ঠিক রাখতে বলছে, অন্যদিকে পুলিশ বাধ্য করছে টোকেন প্রথা চালু রাখতে। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।’
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেট থেকে নিমতলা ছাড়া অন্যসব স্থানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা না মেনে নগরীতে চলাচল করা গাড়ি থেকেই সবচেয়ে বেশি চাঁদা তোলা হয়।
এছাড়া বেশিরভাগ গাড়ির সব ধরনের কাগজপত্র ঠিক থাকে না। এমনকি অনেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। কারও কারও আবার লাইন্সেসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মামলার ভয়ে বেশিরভাগ চালকই ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টরা কনস্টেবল পাঠিয়ে চাঁদা নিতেন। এখন সার্জেন্টদের নিয়োগ দেয়া সাদা পোশাকধারী কিছু লোক মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করেন। টাকা নিয়ে তারা সার্জেন্টদের হাতে তুলে দেন। নগরীর অলঙ্কার রোড, সিটি গেট, নয়াবাজার, জিইসি রোড, নতুন ব্রিজ, কালুরঘাট, বহদ্দারহাট, সদরঘাট এলাকায় পুলিশের ভাড়া করা এসব লোক ব্যাপক চাঁদাবাজি করছেন। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা ট্রাফিকের ডিসির কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
আরও পড়ুন >> অপশক্তির উসকানিতে সাড়া দিও না : কাদের
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরে অনিয়মের প্রধান কারণ হলো মালিক-শ্রমিকদের নামে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলো। এসব সংগঠনের নেতারাই জাল লাইসেন্স দিয়ে যাকে-তাকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আবার তাদের জেল-জরিমানা করা হলে হয়রানির অভিযোগ তোলে। হুটহাট গাড়ি বন্ধ করে দেয়। টোকেন নিয়ে যা হয় তার পেছনেও রয়েছে এসব নেতারা। তারাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে দায়িত্বপালন করা সার্জেন্ট ও টিআইদের অবৈধ আয় অন্য জেলা শহরের তুলনায় অনেক বেশি। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব ভবন বানিয়ে ও ফ্ল্যাট কিনে বেশ কয়েকজন সার্জেন্ট ও টিআই বসবাস করছেন। এমনও আছে, সার্জেন্ট ও টিআইরা মিলে পুরো একটি ভবন বানিয়েছেন, সেখানে পরিবার নিয়ে থাকছেন তারা। ভবনের নামও রটে গেছে, টিআই ভবন!
তাদেরই একজন চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা আবুল কাশেম চৌধুরী। যিনি বর্তমানে বন্দর জোনের টিআই (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত।
জানা গেছে, সরকারি এ দায়িত্বের বাইরেও তিনি পরিচালনা করেন একাধিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। মেসার্স চৌধুরী কন্টেইনার (রিকন্ডিশন কন্টেইনার বিক্রির প্রতিষ্ঠান) ও মেসার্স চৌধুরী অ্যান্ড মা রিজিয়া ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি (পরিবহন ঠিকাদার) নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড আছে আবুল কাশেম চৌধুরীর নামে। বন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় টিআই আবুল কাশেম এ দুটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাপরিচালক মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে চালকরা যে কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন তার অন্যতম কারণ হলো টোকেন বাণিজ্য। শ্রমিক-মালিক সংগঠন, ট্রাফিকের সার্জেন্ট ও টিআইদের নামে চলে এ টোকেন বাণিজ্য। ’
তিনি বলেন, ‘এ টোকেন পেয়ে লাইসেন্স ছাড়া, গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই জেলার সিএনজি অটোরিকশাগুলো নগরীতেও ঢুকে পড়ছে। অবৈধ এ টোকেন বাণিজ্যে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’
পরিবহন খাতের দুর্নীতি দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) কাজ করার আহ্বান জানান মোজাম্মেল হক।
আরও পড়ুন >> দূরপাল্লার বাসও বন্ধ
টোকেন বাণিজ্য প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। টোকেন দিয়ে অবৈধভাবে কেউ গাড়ি চলাচলে সহযোগিতা করতে পারে না। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ রয়েছে, আবার এসব অভিযোগের পেছনে কথাও রয়েছে। মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে যখনই অবৈধ গাড়ি ও গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান শুরু করে তখনই তারা গাড়ি বন্ধ করে আন্দোলনে নামে। বলে পুলিশ তাদের হয়রানি করছে। অথচ তাদের অনেকেরই যথাযথ কাগজপত্র থাকে না। শিক্ষার্থীদের এ কদিনের আন্দোলনে তো মানুষ দেখেছে, এ সেক্টরে কী পরিমাণের অনিয়ম হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শেখার অনেক বিষয় রয়েছে। সাধারণ জনগণও অনেক কিছু শিখছে তাদের কাছ থেকে।’
এমআরএম/এমএআর/এমএস