নতুন কর্মসূচি নিয়ে যা ভাবছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান কর্মসূচিতে সন্তুষ্ট নন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলটির সিনিয়র নেতারাও নতুন কর্মসূচির তাগিদ অনুভব করছেন। হঠকারি কোনো কর্মসূচি নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান যৌক্তিক কঠোর কর্মসূচি। বিগত ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও কঠোর কর্মসূচির হুংকার দিচ্ছে। ওই বছর টানা অবরোধ-কর্মসূচি ঘোষণা হলেও এখন পর্যন্ত তার সমাপ্তি ঘোষণা হয়নি।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘরের মধ্যে কর্মসূচি বন্ধ করে রাজপথে কর্মসূচি পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও বলেছেন আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে দাবি আদায়ের পরিবেশ তৈরি করবেন তারা। এই প্রেক্ষিতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের নতুন কর্মসূচি নিয়ে কী ভাবছেন? এ বিষয়ে জানতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

বিএনপির গত নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেছে দলটির হাইকমান্ড। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীতে নতুন কমিটি হয়েছে। নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফিরোজ আলম। নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কর্মসূচি চায়, সরকার আমাদের ঘরের ভেতর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করছে। আমরা সামনের দিনে সরকার পতনের কর্মসূচি চাই। হঠকারি কর্মসূচি তৃণমূল চায় না। আগামীতে এমন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি দেয়া হবে যা বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে তা সফল করবে।’

কী ধরনের কর্মসূচি চাইছেন, গতানুগতিক নাকি নতুন কর্মসূচি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে। সরকার সুদীর্ঘ ৮/৯ বছর গুম-খুন-জুলুমের পরও যেকোনো কর্মসূচি অতীতের চেয়েও সফল করার জন্য গতানুগতিক কর্মসূচি চাই না, সরকারের স্বৈরাচারিতার জবাব দেয়ার জন্য যে কর্মসূচি প্রয়োজন সেই কর্মসূচি চাই।’

বিগত আন্দোলনে যেসব এলাকার বিএনপির নেতারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার মধ্যে একটি গাইবান্ধা। ওই এলাকার একটি আসনের হয়ে ধানের শীষের প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। কর্মসূচির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র নেতারা রয়েছেন, ওনারা নিশ্চয়ই সময়োপযোগী কর্মসূচি দেবেন।’

বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সাংগঠনিক দুর্বলতা। অনেকে বলে আরকি বড় আন্দোলন করবে, কিন্তু বড় আন্দোলন করার এ মুহূর্তে শক্তি নাই। সংগঠন যদি আপনার না থাকে তাহলে কীভাবে আন্দোলন হবে? বিএনপি সংগঠনকে সাবেক এমপিরা খেয়ে ফেলেছে। দলের সাবেক এমপিদের গুরুত্ব দিতে গিয়ে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের গুরুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে এ সাংঠনিক দুর্বলতা নিয়ে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গসংগঠন যেগুলো আছে সবগুলোকে দ্রুত পুনর্গঠন করা। জেলা বিএনপি পুনর্গঠন করা। আমাদের এখানে বিএনপি দুইটা কর্মসূচি পালন করে দুই ভাগে। কিন্তু কমিটিগুলো দিলে এ দুর্বলতাটা থাকতো না।’

বলা হয় যে সরকার আপনাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয় না বা পুলিশের গুলির মুখে রাস্তায় আপনাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে পারেন না বলছেন। সে ক্ষেত্রে কী ধরনের কার্যকরী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হরতালের মতো কর্মসূচিতে তো আমাদের যেতে হবে। হরতাল ধর্মঘটের মতো কর্মসূচিতে অবশ্যই যেতে হবে। সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কর্ণপাত করছে না, এ ফ্যাসিবাদ সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে দিচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যে ধরনের কর্মসূচি দেবে আমরা রাজপথে তা পালনের জন্য প্রস্তুত আছি।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিন মনে করেন, ‘সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা উচিত।’

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এস এম মোশারেফ হোসেন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে যে, কর্মসূচি চলমান আছে। যেমন বিক্ষোভ বা প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। নেতৃবৃন্দ যদি এর চেয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন মাঠ পর্যায়ে কঠোর কমর্সূচি চাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এগুলো ঠিক আছে। এগুলো চলে। এগুলো ওয়ার্মআপ। চূড়ান্ত কর্মসূচির আগে যে ওয়ার্মআপ হয় ওইটারই প্রক্রিয়া চলছে।’

তিনি বলেন, ‘বলে-কয়ে কঠোর কর্মসূচি হয় না, এটা একটা রাজনৈতিক বক্তব্য। কঠোরতা হলো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি। সরকারের যখন জুলুম বেড়ে যায় তখন স্বাভাবিক স্পেসটা পায় না তখন যে দল আন্দোলন করছে তারা যদি একটা অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে কর্মসূচিটা কঠোর হয়ে যায়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। আপনি দেখেন ৯০-এ এক রকম রূপ ধারণ করেছে, ওয়ান-ইলেভেনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একটা ছোট বল খেলা নিয়ে একটা রূপ ধারণ করে।’

সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সামনে কঠোর কর্মসূচির তাগিদ দিয়েছিলেন দলটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। নতুন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কঠোর থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি চাইছি এবং এটা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও দাবি। সেই দাবির প্রেক্ষিতে আশা করি ইনশআল্লাহ কঠোর কর্মসূচি আসবে। নেতাকর্মীরা সেই ডাকের অপেক্ষায় আছে। পরিস্থিতি পরিবেশ হয়তো বিবেচনা করছেন সিনিয়র লিডাররা। আশা করছি কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে। এখন যেইভাবে আছি সেভাবে তো এই কর্মসূচিতে ম্যাডামের মুক্তি আদায় করতে পারবো না। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের থেকে রাজপথের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং ইনশাআল্লাহ আন্দোলন হবে এটা আমি বিশ্বাস করি।’

কঠোর কর্মসূচি বলতে কী ধরনের কর্মসূচির কথা বলছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসছে।’

সেই ধরনের কর্মসূচি পালনের সামর্থ্য কি বিএনপির আছে? এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘বিএনপি একটি বিশাল বড় দল। এই দলের সামর্থ্য আছে কি নেই সেটা আপনারা অতীতে দেখছেন। এখন পুলিশ যেভাবে গুলি করে, সে পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে একটু ভিন্ন রকম কাজ করে। কারণ একটা লোক যদি আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মারা যায়, তাহলে তার ফ্যামিলি তো শেষ হয়ে যায়। এ কারণে সবাই একটু চিন্তাভাবনা করে মাঠে নামতেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী পুলিশ তাদের আগের ভূমিকায় থাকবে না। আগামীতে সাধারণ নির্বাচন, পুলিশ যদি তাদের আগের ভূমিকায় থাকে, আর কোনো কারণে সরকার যদি চেঞ্জ হয় বা আমরা যেটা চাচ্ছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তো অবশ্যই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তো ধরেন এই পুলিশদের বিরুদ্ধে একটা অ্যাকশন আসতে পারে। এ জন্য আমি বিশ্বাস করি পুলিশ অতীত আন্দোলনে যে ভূমিকায় ছিল আগামী আন্দোলনে সেই ভূমিকায় থাকবে না।’

কেএইচ/বিএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।