সরকারি চিকিৎসকদের ‘ডাবল ডিগ্রি’ বন্ধ হচ্ছে!
#ক্লিনিক্যাল সকল সাবজেক্টে ডেপুটেশন বন্ধ।
#আগামী জুলাই থেকে অ্যানেস্থেসিওলজি/ফরেনসিকে এমডি/এমএস কোর্স অধ্যয়নের অনুমতি।
#ঢাকায় সংযুক্তি পদের অতিরিক্ত চিকিৎসকদের স্ব স্ব কর্মস্থলে প্রেরণ।
#তিন কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব কেন্দ্রে চিকিৎসক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স বন্ধ।
সরকারি চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় ডাবল ডিগ্রি গ্রহণ বন্ধ হচ্ছে! মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট দূর করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাস্থ্যসচিব বলেন, চিকিৎসকদের কোনো অবস্থাতেই উচ্চতর ডাবল ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ দিয়ে সময় নষ্ট করা সমীচীন হবে না। সভায় সরকারি চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় ডাবল (দ্বৈত) ডিগ্রি গ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
‘দেশে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও মাঠ পর্য়ায়ের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকল্পে উচ্চশিক্ষার জন্য চিকিৎসকদের অনুকূলে প্রেষণ মঞ্জুরে ভারসাম্যপূর্ণ উপায় নির্ণয়ে’অনুষ্ঠিত ওই সভায় ঘুরে ফিরে তৃণমূল পর্য়ায়ে চিকিৎসকের নিদারুণ সংকটে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে জানানো হয়।
সভায় জেলা-উপজেলায় চিকিৎসক সংকট দূর করতে ক্লিনিক্যাল সব বিষয়ে ‘আপাতত’ ডেপুটেশন বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষ করে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসকের চরম সংককট মোকাবেলায় ‘অপ্রয়োজনীয়’ কোর্সসমূহ আপাতত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন)।
অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) জানান, চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘প্রেষণ নীতিমালা’সংশোধিত ২০১৩ অনুসরণ করা হচ্ছে। সার্জারি, মেডিসিন, পেডিয়েট্রিকস্ ও গাইনোকলজি- এ চার মূল বিষয় ও ৩৩টি সাব স্পেশালিটি বিষয়ে চিকিৎসকরা উচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করে থাকেন।
তিনি জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৯৫১ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন মেয়াদে উচ্চতর কোর্সে বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেষণ মঞ্জুর করে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়া হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিএসএমএমইউ থেকে আরও পাঁচ শতাধিক চিকিৎসকের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। আবেদনগুলোর কোর্স ১ জানুয়ারি, ১ মার্চ ও ১ জুলাই শুরু হওয়ার কথা। এ সব কোর্সের প্রথম পর্বের মেয়াদ ১ বছর, ২ বছর এবং ৩ বছর, ২য় ও ৩য় পর্বের মেয়াদও অনুরূপ।
তিনি আরও জানান, প্রেষণের জন্য প্রাপ্ত আবেদন থেকে ৮০ চিকিৎসকের আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৯ বেসিক বিষয় ও ৫১ ক্লিনিক্যাল বিষয়ে সাব-স্পেশালিটির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব বলেন, ঢালাওভাবে ডেপুটেশন বন্ধ করা যৌক্তিক হবে না। বরং তা যৌক্তিক পর্যায়ে সীমিত করার জন্য প্রস্তাব দেন তিনি। তবে একই সঙ্গে তিনি চিকিৎসকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ তিনটি কেন্দ্রের বাইরে অন্য সব জায়গায় ছয় মাসের জন্য বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন।
সভায় উপস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) বলেন, ডেপুটেশন বন্ধ রাখা উচিত হবে না। তিনি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ছুটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো সচল রাখার জোর দাবি জানান।
সভার সার্বিক আলোচনা শেষে, ক্লিনিক্যাল বিষয়ে পার্ট-ওয়ান বা ফেজ-এ’র আবেদনের জন্য ডেপুটেশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে যারা অ্যানেস্থেসিওলজি এবং ফরেনসিক মেডিসিনে শিক্ষার জন্য যেতে চায় তাদেরকে ডেপুটেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে বিভিন্ন কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা চলমান থাকবে। যারা এখন বিভিন্ন কোর্সে সুযোগ পেয়েছেন তাদেরকে পরবর্তী সেশনে বিনা পরীক্ষায় ভর্তির যোগ্য বলে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
এমইউ/এএইচ/বিএ