রাসায়নিকে ফল পাকালেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৮ এএম, ১৩ জুন ২০১৮

মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। চেয়ারম্যান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্যে ভেজাল এবং ভেজালবিরোধী প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগোনিউজ-এর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভেজাল আম ধ্বংস করার ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি মনে করেন রাষ্ট্রীয় এই কর্তা। ফরমালিন বা অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে জনমনে আতঙ্ক থাকলেও তিনি অবশ্য ‘এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’বলেই জানালেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। প্রথম পর্ব

জাগো নিউজ : চলমান ভেজালবিরোধী অভিযান কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

মাহফুজুল হক : ভেজালবিরোধী অভিযানকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে বলেই আমি মনে করি। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত আছে বলেও আমার জানা নেই। খাবারে বিষ! এটি কোনো সভ্য, সুস্থ সমাজের দৃষ্টান্ত হতে পারে না। খাবারে রঙ, ও পচা-বাসী খাবার নিয়ে তো অভিযোগের শেষ নাই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। নিম্নমানের প্যাকেটে খাবার প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। চলমান অভিযান মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এনেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ : বিষাক্ত বলে হাজার হাজার মণ আম ধ্বংস করল র‌্যাব-পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক এই অভিযান নিয়ে কী বলবেন?

মাহফুজুল হক : কোন অঞ্চলের আম কখন বাজারে আসবে তার একটি পঞ্জিকা তৈরি করে দিয়েছে সরকার। এটি অবশ্যই আমের অপরিপক্বতার সময় যাচাই করেই করা হয়েছে। এর আগে আম বাজারজাত করা অন্যায় এবং সে আমে পুষ্টিমান কম থাকবে। কারণ অপরিপক্ব আমে গুণাবলি থাকে না। এর পুষ্টিমান নিম্ন। কৃত্রিম উপায়ে আম পাকানো যায় বটে, তবে সেটা অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। রাসায়নিকে ফল পাকালেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি নয়, যদি সেটা সহনীয় মাত্রায় হয়।

জাগো নিউজ : কোথাও সিস্টেমের বালাই নেই। রাসায়নিক দ্রব্য কতটুকু ব্যবহার করছে কারবারিরা, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও নেই। এরপরেও আপনি যদি বলেন, রাসায়নিক পদ্ধতিতে ফল পাকালেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়- এমন মন্তব্যে কারবারিরা বিষ প্রয়োগে আরও বেপরোয়া হবে কি না?

মাহফুজুল হক : অনেকেই তো এখন ফলের নাম শুনলেই মনে করেন, এতে বিষ। রাসায়নিক দ্রব্য মেশালেই যে ফল বিষ হয় না, তা পরিষ্কার করার জন্যই আমরা ব্যাখ্যা দিচ্ছি। আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, তার জন্যই আমরা পরিষ্কার ধারণা দিচ্ছি।

জাগো নিউজ : আতঙ্ক ছড়ানোর তো যথেষ্ট কারণও আছে। মানুষকে তো বিষ খাওয়ানো হচ্ছে!

মাহফুজুল হক : ফলে ইথোফেন থাকলে, তা ক্ষতিকর হয় না। বিআরসির একটি গবেষণা আছে এ নিয়ে। সেখানে ২৫০ পিপিএম থেকে ১০ হাজার পিপিএম মাত্রার ইথোফেন ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এর মাত্রা ২ পিপিএম-এর নিচে চলে এসেছে। তার মানে এর উচ্চমাত্রায় ব্যবহার থাকলেও ক্ষতিকর প্রভাব থাকে না। এ কারণে আমরা বলেছি, এর ব্যবহারে ঝুঁকি নেই।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি র‌্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে ভেজালবিরোধী অভিযান পর্যবেক্ষণ করেছেন?

মাহফুজুল হক : পর্যবেক্ষণ ঠিক না। তবে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। মানুষের মাঝে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। গত ২৩ মে আমরা একটি কর্মশালাও করেছি এ নিয়ে। সেখানে অনেক বিশেষজ্ঞও ছিলেন।

জাগো নিউজ : আপনারা বলছেন, তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। তাহলে র‌্যাব-পুলিশ কিসের ভিত্তিতে আম ধ্বংস করল?

মাহফুজুল হক : তারা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই অভিযান পরিচালনা করছেন। ইথোফেন এবং কার্বাইড ব্যবহারের প্রমাণ পাচ্ছে বলেই তারা আম ধ্বংস করছেন।

জাগো নিউজ : কিন্তু আপনি বললেন, ইথোফেন মেশালেই ক্ষতি নয়?

মাহফুজুল হক : ইথোফেন ব্যবহার নিয়ে ভুল ধারণা আছে এবং আমরা তার ব্যাখ্যা দিয়েছি। কর্মশালার আলোচনায় এসেছে ইথোফেন দিয়ে আম পাকানো আমাদের দেশে স্বীকৃত।

জাগো নিউজ : আপনার ব্যাখ্যায় বিরোধিতা মিলছে

মাহফুজুল হক : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আম কেটে কেটে দেখেছে। অপরিপক্ব আম ইথোফেন এবং অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার করে পাকানো হয়েছে। অননুমোদিত কেমিক্যাল ব্যবহার করেছে এবং তা কারবারিরা স্বীকার করেছেন। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জাগো নিউজ : আপনার অবস্থান ঠিক পরিষ্কার করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তাহলে রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে!

মাহফুজুল হক : প্রাথমিক অবস্থায় ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। সবাই খাদ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাতারাতি সবাই এক কাতারে চলে আসবে তা মনে করা ঠিক হবে না। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোও দাঁড় করিয়েছি। সমন্বয়ের যে ঘাটতি আছে তা পুষিয়ে নিতে সক্ষম হব।

জাগো নিউজ : আপনার প্রতিষ্ঠান ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’এর সক্ষমতা আছে?

মাহফুজুল হক : আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করত খাদ্য নিয়ে। সেন্ট্রাল রেগুলেটরি বডি হিসেবে কাজ করার জন্যই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান যাতে নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে, সে জন্যই আমরা শুধু কো-অর্ডিনেট করব। ঘাটতি থাকলে আমরা তা পূরণ করার পথ বাতলে দেব।

জাগো নিউজ : সমন্বয়ের অভাব তো সর্বত্রই। আপনার বাতলানো পথে হাঁটবে সবাই?

মাহফুজুল হক : ঠিকই বলেছেন। আমাদের দেশে কেউ কারও কর্তৃত্ব মানতে নারাজ। সবাই নিজের শক্তি প্রকাশ করতে অভ্যস্ত। অথচ নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমরা যেকোনো নির্দেশনা দিলে সে প্রতিষ্ঠান মানতে বাধ্য। তবে আমরা বাধ্য করতে চাই না। আমরা সবার সহযোগিতা নিয়েই এগুতে চাই। আমরা সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। ইন্ডিয়ায় নিরাপদ খাদ্য নিয়ে যে আইন করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমাদেরও মিল আছে। আমরা আশাবাদী।

জাগো নিউজ : ইন্ডিয়ায় রাষ্ট্রীয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন নিজ প্রতিষ্ঠানকে?

মাহফুজুল হক : সরকার তো কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন করে যাচ্ছি। প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।

এএসএস/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।