তারপরও বাড়লো ছোলা ডাল চিনির দাম
* মজুদ পর্যাপ্ত
* সরকার বলেছিল দাম বাড়বে না
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কম। মজুদও পর্যাপ্ত। তাই এবার রমজানে মূল্যবৃদ্ধি পাবে না বলে দাবি করেছিল সরকার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা। তারপরও রোজার আগেই বাড়লো নিত্যপণ্যের দাম। ছোলার দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। শুধু ছোলাই নয় বেড়েছে ডাল ও চিনির দামও। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
রাজধানীর মুগদা, শান্তিনগর, মালিবাগসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি ছোলা মানভেদে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়, খেসারি ডাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, ডাবলি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও ভালোমানের মসুর ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিতে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি করা হয়েছে। ডালও মজুদ আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় দামও কম। রমজান এসে পড়েছে কিন্তু পণ্য পড়ে আছে, বিক্রি হচ্ছে না। তাই দাম বাড়ার প্রশ্লই ওঠে না। এ বছর যে ছোলা-ডাল আমদানি করা হয়েছে, তা দিয়ে আগামী বছরও চলে যাবে।
খুচরা বাজারে বেশি দাম নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি ছোলা ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমারেরটা সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৬৩ টাকায়। খুচরা বাজারে কত টাকায় বিক্রি করবে তা খুচরা ব্যবসায়ীদের বিষয়। তারা যদি বেশি দামে বিক্রি করে তা দেখার দায়িত্ব সরকারের।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি বলেছিলেন, এবার পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় রমজানে নিত্যপণ্যের সংকট হবে না। ফলে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ দেশজ উৎপাদন ও আমদানির ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদক, আমদানিকারক, পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, খেজুর ইত্যাদির বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরও বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। শান্তিনগর বাজারের মমতা স্টোরের বিক্রেতা জানান, রোজায় যেসব পণ্য বেশি চলে তার দাম গত কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। ছোলার কেজি ৭০ টাকা ছিল এখন ৭৫ টাকা। আর মিয়ানমারের ছোলা ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ডালও কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বাজারে দাম না বাড়লেও খুচরায় বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজার থেকে মালামাল আনতে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়। এতে খরচ বেশি পড়ে। ফলে পাইকারি বাজারে না বাড়লেও আমরা ডালের দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছি।
বেসরকারি চাকরিজীবী সাব্বির রহমান বলছিলেন, ‘সরকার যত কথাই বলুক রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেই। বাজারে আসলেই এর প্রমাণ মিলে। ছোলা, ডাল, চিনিসহ সব নিত্যপণের দাম বাড়ছে। মন্ত্রীরা বললো দাম বাড়বে না। বলেই বসে আছে। তারা বাজারের খোঁজ নেয় না। নিলে হঠাৎ কয়েকদিনের মধ্যে দাম বাড়লো কেন? ৭০ টাকার ছোলা ৮০ টাকা বিক্রি করছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ এ ভোক্তা বলেন, ‘মিডিয়া সবকিছুই তুলে ধরছে। কোথায় দাম বেশি রাখছে, ঘরে বসেই সবাই দেখছে। কিন্তু সরকার বলছে, দাম বাড়বে না। অর্থাৎ সরকারের বলার দরকার বলছে। ব্যবসায়ীরা ঠিকই বেশি দাম নিচ্ছে। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। দিন শেষে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই বলেছে, এবার রমজানে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ছে না। তারপরও কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়াবে। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। বাজার মনিটরিং করতে হবে। আর সরকার যদি বাজার মনিটরিং না করে তাহলে পণের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।’
ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে একসঙ্গে বেশি পণ্য না কিনে যতটুক প্রয়োজন ততটুকু ক্রয় করুন। কারণ বেশি পণ্য কিনলে বাজারের ওপর চাপ পড়ে। এতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।’
এসআই/জেডএ/জেআইএম