‘দিবসে আমগো ভাগ্যের বদল হয় না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০১ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানীর চারদিকে বৃষ্টি আচ্ছন্ন আবহাওয়া। রোববার দুপুর গড়িয়ে তখনও বিকেল হয়নি। হিমেল হাওয়া আর অন্ধকার ভর করা রাজধানীতে থেমে নেই আব্দুল লতিফ মিয়া। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষটির কপাল বেয়ে টপ টপ করে তখনও ঝরছে ঘাম। একের পর এক সিমেন্ট ও ইটের-সুরকির বস্তা তুলে দিচ্ছেন অপর শ্রমিক শাহ আলীর মাথায়। রোজগারের অল্প টাকায় জীবন যুদ্ধ চলছে তার।

আব্দুল লতিফ বলেন, মে দিবস শ্রমিকের হলেই বা কি এসে যায়? আমগো কি বেতন-রোজগার বাড়ব? আমরা কি তিন বেলা নিশ্চিন্তে খাইয়া পইরা থাকতে পারব? তিনি বলেন, শ্রম অধিকার বলতে আমার কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়াকে বুঝি, কিন্তু সেটা আমি পাই না৷ মাসে যা পাই অতি সামান্য। এই টাকা দিয়ে বহু কষ্টে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি৷ অনেক সময় বেতন বকেয়া রেখেই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়৷ তাই চাকরি বাদ দিয়া এখন দিনমজুরের কাজ করছি।

f

রোববার পড়ন্ত দুপুরে কথা হয় বিজয় সরণি থেকে তেজগাঁও ফ্লাইওভারে উঠার মুখে। আব্দুল লতিফ মিয়া কাজ করেন তেজকুনিপাড়ার নজরুল ইসলামের দোকানে। তার কাজ অর্ডারের সিমেন্ট, ইট, ইটের সুরকি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার সড়কনগরে। প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে বিয়ে করে এখন যে যার মতো। জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের ভয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি।

তিনি বলছেন, সন্তানদের উপর আর ভরসা করি না। যতদিন বিয়ে- শাদি করেনি ততদিন ভালোই ছিল। ওরাও কাজকর্ম করে খায়। কিন্তু বিয়ের পর বাপ-মায়ের স্থান আর হয়নি। তাই ঢাকায় আসা।

f

কাল মে দিবস। শ্রমিকদের এমন দিনে কেমন সুদিনের আশা করছেন জানতে চাইতে লতিফের পাল্টা প্রশ্ন, ‘মে দিবস শ্রমিকের হলেই বা কি এসে যায়? আমগো কি বেতন-রোজগার বাড়ব? ২০ বছর আগে যেমন ছিলাম এখনও তেমনি আছি। পরিবর্তন তো আসেনি। দিন এনে দিন খেয়েই জীবন যাচ্ছে।

লতিফ বলেন, আগে গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। হঠাৎ করে নোটিশ ছাড়াই চাকরি নাই। মাঝে রিকশা চালিয়েছি। বছর দেড়েক হলো ভালো একজন মালিকের অধীনে দিন মজুরের কাজ করছি। কাজ থাকলে কাজ করে নগদ টাকা পাই। কাজ না থাকলে রিকশা চালাই।

d

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ছেলে জন্মের পর ভাবনা ছিল বৃদ্ধ বয়সে আমাগো (স্বামী-স্ত্রীর) কষ্ট থাকব না। কই আর কষ্ট গেল। কষ্ট আরও বাড়তাছে। যা ইনকাম তাতে ঘর ভাড়া ও খাওয়ায় শেষ। এই বয়সে অসুস্থ হলে চিকিৎসা করার টাকা জোগাড় করতে পারি না। মন খুব খারাপ হয়। তবে ছেলেদের উপর আক্ষেপ নেই। ওরাও একদিন বৃদ্ধ হবে, বুঝবে তখন। আশা করছি ওদের সন্তানরা এমন দিনের মুখোমুখি হবে না।

‘তাড়া আছে বাবা, আরও কয়েক টিপ মাল নিয়া এইহানে আইতে হইব। দিবস আইব দিবস যাইব, জানি না আমগো ভাগ্যের বদল হবে কিনা? কাজ-কাম করে খাই। যতদিন বাঁচি আল্লাহ যেন ভালাই রাখে।’

জেইউ/ওআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।