উত্তাল সেই রাতের ক্যাম্পাসে আজ সুনসান নীরবতা

থানার সামনে রাস্তার আইল্যান্ডে বুট জুতা খুলে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে খোশগল্পে ব্যস্ত কয়েকজন পুলিশ সদস্য। থানার গেট থেকে হাসিমুখে বেরিয়ে আসছে এক কিশোর। সমবয়সী কয়েকজন ওই কিশোরকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করে, কীরে থানায় দেড়দিন কাটলো কেমন? প্রশ্নোত্তরে ওই কিশোর বললো, ‘ঠাসাঠাসি-গাদাগাদি কইরা একটা ছোট্ট রুমে কত্তো জনরে যে রাখছে। গরমে জানডা বাইর অইয়া গেছে।’

এমন সময় জাতীয় জাদুঘরের ভেতর থেকে র‌্যাবের এক কর্মকর্তাকে সদলবলে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। জাদুঘরের বিপরীত দিকের আইল্যান্ডে দুটি পথশিশুকে ছেড়া চাদর বিছিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।

একটু সামনে শাহবাগ থানা থেকে টিএসসি পর্যন্ত তাকিয়ে দেখা যায়, গোটা রাস্তায় বলতে গেলে শুনশান নীরবতা। হঠাৎ দু’একটি ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে চলে যেতে দেখা যায়। এ দৃশ্য আজ রাত ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শাহবাগ এলাকার।

অথচ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেও ক্যাম্পাসের এ স্থানটি ছিল উত্তাল, বিক্ষুব্ধ ও আতঙ্কময়। কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার দুপুর থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান গ্রহণ করে আন্দোলনকারীরা। মূল রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। সন্ধ্যার পর চারুকলার সামনে ফের জড়ো হয়ে আন্দোলনরতরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় গোটা এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ নিরাপত্তাজনিত কারণে আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে।

রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিন ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখো গেছে, নিউমার্কেট থেকে রাজু ভাস্কর্য়, দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি ও টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তায় শুনশান নীরবতা। ঢাবি উপাচার্য়ের বাড়ির সামনে ডজন দুয়েক পুলিশ সদস্যকে অবস্থান গ্রহণ করতে দেখা যায়।

শুনশান নীরবতার মাঝে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দলবেঁধে মোটরসাইকেল নিয়ে গোটা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। চারুকলা ও রোকেয়া হলের সামনের রাস্তায় ইটপাটকেল ও লাঠি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের চাকরিতে প্রবেশের পর গতকালই প্রথম ভয় পাই।’

এই কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু পুলিশের চাকরি করেন বলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছেন। আন্দোলন কয়েক ঘণ্টার জন্য স্থগিত করায় আজ রাত জেগে থাকবেন না। বাড়ি ফিরে আরামের ঘুম দেবেন বলে জানান।

এমইউ/বিএ