খেলে প্রশান্তি, দামে অস্বস্তি তরমুজে
চৈত্রে গরমের হাঁসফাঁসে মৌসুমি রসাল ফলের কদর বেড়ে যায় বহুগুণ। বাজার ভরে গেছে রসাল মৌসুমি ফল তরমুজে। ফলের দোকানগুলোর পাশাপাশি পাড়া মহল্লায়, অলি গলিতে, ভ্যানেও বিক্রি হচ্ছে চৈত্রের গরমের প্রশান্তির তরমুজ। তবে দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে ক্রেতা।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে প্রচুর তরমুজের আমদানি তবুও দাম তুলনামূলক বেশি তবুও থেমে নেই বিক্রি। মৌসুমি ফল ও গরমের প্রশান্তি পাওয়ায় তরমুজ কিনছেন অনেকেই। দাম বেশি হলেও বেশির ভাগ ক্রেতারা এই মৌসুমি ফল তরমুজ কিনছেন অনেকটা শখের বসেই। যারা কিনছেন তারা বলছেন, শখ করে কিনেছি তবে দাম কিছুটা কমলে পুরো সিজেনজুড়ে নিয়মিতই কিনবো।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমি ফল তরমুজ বাজারে নতুন আসায় এর চাহিদা অনেক বেশি, সেই কারণে দামও একটু বেশি। তবে কিছুদিনের মধ্যে এই দাম কিছুটা কমে আসবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি ফলের মার্কেট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। বাজারগুলোতে সাদা (বাংলালিঙ্ক) ও কালো (তরমুজ) দুই প্রকারের তরমুজ বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মিরপুর ফল বিক্রির দোকানগুলোতে চলতি সিজেনে সিংগভাগ দোকানি অন্য ফল বাদ দিয়ে শুধুই তরমুজ বিক্রি করছেন। বাজারঘুরে কথা হয় এসব দোকানির সঙ্গে। এমনই একজন দোকানি রাহাত আহমেদ বলেন, তরমুজের বাজার শুরু হওয়ায় প্রথম দিকে ভালো লাভ থাকে, যত গরম পড়বে তত বিক্রি হবে তরমুজ। বর্তমানে একটু বেশি দাম যাচ্ছে তবে খুব শিগগিরই এ দাম কমে আসবে। প্রথম দিকে কিছুটা লাভ বেশি হওয়ায় সব ফল দোকানিই এখন তরমুজ বিক্রি করছেন প্রচুর পরিমাণে।
দরদাম সম্পর্কে আরেক দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, কারওয়ানবাজার, বাদামতলি থেকে আমারা বেশি তরমুজ আনি। সেখানে থেকে মাঝারি সাইজের ৪/৫ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি ১শ’র দাম সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় কেনা পড়ে। এছাড়া সাইজ ভেদে এসবের দাম নির্ভর করে। ১০/১২ কেজি ওজনের তরমুজ প্রতি শ’ বিক্রি হয় ২০ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, বাজারে আমরা মাঝারি সাইজের তরমুজ বিক্রি করছি ২৫০- ৩০০ টাকায়, আর বড় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫৫০ টাকায়। প্রথম দিকে তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, গরম বাড়লেই তরমুজের দাম বাড়ে, আবার একদিন বৃষ্টি হলেই সেই তরমুজের দাম অনেক কমে যায়। এছাড়া ১০০ তরমুজের মধ্যে ১০ পচা-নষ্ট বের হয়, অন্যদিকে দোকান ভাড়া কর্মচারী বিল সব মিলিয়ে একটু বেশি দাম না নিলে লাভ হয় না।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া ফল পট্রি থেকে একটি মাঝারি সাইজের তরমুজ ৪শ‘ টাকায় কিনেছেন হাবিবুর রহমান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, বাজারে এত তরমুজ তবু অনেক দাম, সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষের এই দামে তরমুজ খেতে পারে না। তবুও বাধ্য হয়ে কিনেছি, কারণ আমার ছোট ছেলে তরমুজ খাওয়ার বায়না ধরেছে। এ সিজেনে যখন দাম কমবে সে সময় থেকে নিয়মিত কিনবো। দাম না কমার আগ পর্যন্ত আর কেনা হবে না ,কারণ বর্তমানের এগুলোর বেশি দাম। যখন দাম কমবে তখন নিয়মিত কিনবো কারণ তরমুজ খুবই উপকারী ফল তাই ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানোর জন্য কিনবো।
আরেক ক্রেতা আজাহার আলী তরমুজের দরদাম করে বনিবনা না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বাজারে এত তরমুজ তবুও দাম কমে না। এত দামে কি আর আমরা কিনতে পারি? একটা তরমুজের দাম সাড়ে ৩শ’ টাকা চায়। মৌসুমি ফল বাজারে এসেছে শখ করলাম একটা কিনবো কিন্তু দাম বেশির জন্য কিনতে পারলাম না। তবে পাশে থাকা আরেক ক্রেতা বললেন, দাম বেশি তবে শখের বশে কিনেছি বাজারে আসা নতুন এই মৌসুমি ফলটি। আজ পরিবার নিয়ে এটি খেয়ে শখ মিটাবো। তবে যখন দাম কমবে তখন প্রতিদিনই কিনবো, কারণ এটা খুবই উপকারী।
তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে রাজধানীর একটি বেসকরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আরেফিন বলেন, গরমে ক্লান্তি ভাব দূর করে রসাল ফল তরমুজ। সারাদিনের গরমে শরীর যখন দুর্বল তখন তরমুজই এনে দিতে পারে সতেজতা। তরমুজের রয়েছে বিবিধ উপকারিতা। মৌসুমি ফল তরমুজ গরমে পানির চাহিদা মেটানোর জন্য উপযোগী। এতে থাকা নানা পুষ্টি ও খনিজ উপাদান মানবদেহ সতেজ রাখতে সাহায্য করে। গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
তবে তিনি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্তমানে তরমুজে নানা রকমের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। তাই তরমুজ কেনার সময় সচেতন থাকা প্রয়োজন।
এএস/এসআর/জেআইএম