অর্ধেকে নেমেছে রডের বিক্রি

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৪১ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮

বছরের এ সময় (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ) সবচেয়ে বেশি রড বিক্রি হয়। কিন্তু এবার রডের বিক্রি কমে গেছে। মাসের ব্যবধানে রডের বিক্রি কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।

অস্বাভাবিক হারে মূল্য বাড়ায় বিক্রি কমেছে বলে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডের কমপক্ষে ২০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আর মিলমালিকরা বলছেন, কাঁচামালের আমদানি খরচ, ডলারের মূল্য ও পরিবহন খরচ বাড়ায় রডের মূল্য বেড়েছে। তবে আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মূল্য বাড়ার পেছনে মিলারদের সিন্ডিকেট আছে। এ সিন্ডিকেটই মূল্য বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, মাসের ব্যবধানে মান ও কোম্পানি ভেদে রডের মূল্য কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

ব্যবসায়ীদের মতে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চে সাধারণত রডের মূল্য একটু বাড়ে। কারণ এ সময় নির্মাণকাজ বেশি হয়। ফলে রডের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা বাড়ার কারণে মূল্যও কিছুটা বাড়ে। তবে এবার তা বেড়েছে অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি।

পুরান ঢাকায় অবস্থিত সেন্টু স্টিল হাউসের ম্যানেজার মো. রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস আগে যে রড ৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি, সেই রড এখন কেজিপ্রতি ৫৭ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন মূল্য বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। অথচ এ সময় আমাদের বিক্রি সবচেয়ে বেশি থাকে।

বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীই পাইকারি রড বিক্রি করেন। এখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীরা রড কিনে নিয়ে যান। আবার ঢাকা শহরে যারা বাড়ি বানান তারাও এখান থেকে রড কেনেন। মূল্য বাড়ায় খুচরা বিক্রেতারা এখন রড কিনতে ভয় পাচ্ছেন। আর যারা বাড়ি বানানোর কাজ করছেন তাদের অনেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে বিক্রি কমে গেছে।

রডের মূল্য বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কী কারণে দাম বাড়ছে সেটা আমরা সঠিক বলতে পারব না। তবে মিলমালিকরা জানিয়েছেন, কাঁচামালের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আনার পরিবহন খরচ বেড়েছে। স্কেল বসানোর কারণে আগে এক ট্রাকে যে রড আসত, এখন সেই রড আনতে দুটি ট্রাক লাগছে।

মনির স্টিলের ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রথমে যখন রডের মূল্য বেড়েছিল, সেই সময় বিক্রি ভালোই ছিল। কিন্তু সপ্তাহ দুই ধরে বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। সাধারণত সপ্তাহে আমরা ১০ টনের মতো রড বিক্রি করি। অথচ চলতি সপ্তাহে কোনো বিক্রিই হয়নি।

রডের মূল্য বাড়ার কারণ হিসেবে নাসির উদ্দিনও কাঁচামাল ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আশা করা যায়, ডলারের মূল্য কমলে রডের মূল্যও কমে যাবে। আমরা এমন আভাসই পাচ্ছি।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইংলিশ রোড অবিস্থত আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মো. আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, মূল্য বাড়লে বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। মূল্য বাড়ার কারণে এখন ছোট ব্যবসায়ীরা রড কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে রডের বিক্রি অনেক কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, গত বছরও রডের মূল্য বেড়েছিল। হঠাৎ বাড়া আবার কমার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুণতে হয়েছিল। এক বছর আগে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় প্রায় ৪০০টি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১২৫টি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

কাঁচামাল এবং পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে মূল্য বাড়ছে- এমন কথা উল্লেখ করলে মো. আবু তাহের বলেন, শুধু কাঁচামাল আর পরিবহন খরচ বাড়ার কারণেই নয়, মূল্য বাড়ার পেছনে মিলারদের সিন্ডিকেট আছে। এ সিন্ডিকেটই মূল্য বাড়িয়েছে। কারণ এখন রডের চাহিদা বেশি। এটাকে পুঁজি করে মিলমালিকরা রডের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল মিলস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে মাসুদুল আলম মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বেড়েছে, ডলারের মূল্যও বেড়েছে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে, পরিবহন খরচও বেড়েছে। এসব কারণে রডের মূল্যও বেড়েছে। তাছাড়া সিজনাল (মৌসুম) কারণেও মূল্য কিছুটা বেড়েছে। এ সময় রডের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে, যে কারণে মূল্যও কিছুটা বাড়ে।

এ ব্যবসায়ী বলেন, আমরা তিনটি মাস ব্যবসা করার সুযোগ পাই। বর্ষার সময় তো আমরা লোকসানে পণ্য বিক্রি করি। সেই সময় তো কেউ খোঁজ নেয় না। আর এখন মূল্য বাড়ার কারণে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ রাখছেন- এমন অভিযোগও সঠিক নয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখে বসে থাকবে না। কারণ তারা জানে এ সময় মূল্য কিছুটা বাড়বে। আর ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য বাড়ার কারণে এখন হয়তো রড কিনছে না, কিন্তু তাদের বিক্রি বন্ধ নেই। তারা আগে যে রড কিনে রেখেছিল সেই রড এখন বিক্রি করছে।

এমএএস/জেডএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।