বেতন পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষক

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮

বেসরকারি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৯০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বেশির ভাগই বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এর আগে দেশের ৬২টি বেসরকারি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নীতিমালা ছাড়াই বেতন ভাতা দেয়া হত। নীতিমালা করার পর বিদ্যালয়গুলো বেশি ভাগ কর্মরতদের বেতন-ভাতা আটকে গেছে।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩২তম বৈঠক এই তথ্য জানান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান।

এখন বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছে কয়েকজন শিক্ষক।

কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, সচিব বলেন, ২০১৫ সালের আগে তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য কোনো নীতিমালা ছিল না। নীতিমালা প্রণয়ন করে ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়া শুরু হয়। তবে বেশির ভাগ শিক্ষক ও কর্মচারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য সমস্যা থাকায় বেতন-ভাতা দেয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ প্রথমে সংশ্লিষ্ট একটি এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করা হত। এটিও ছিল সরকারি প্রচলিত সব রীতিনীতির বাইরে। এখন বেতনভাতা প্রতিবন্ধী ফাউডেন্ডশনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে। আর তাদের সহজে ভেতন-ভাতা দেয়ার জন্য ডেটাবেজের কাজ চলছে।

টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার বল্লা ইউনিয়নের প্রজন্ম প্রতিবন্ধী স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। এর আগে নিয়মিত বেতন পেলেও নীতিমালা করার পর বেতন-ভাতাদি বন্ধ রয়েছে। প্রায় তিন বছর আমরা কিছুই পাচ্ছি না। কিন্তু চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে বলতেও পারছি না। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাক-শ্রবণ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলে ২৬ শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ওই স্কুলের অধিকাংশই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকায়।

সেখানকার শিক্ষক মো. রফিকুল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এসএসসি পাস করে এ পেশায় এসেছিলাম। নীতিমালা অনুযায়ী বিএ পাস ছাড়া বেতন দেয়া হবে না। তাহলে আমাদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল কেন?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জাগো নিউজকে বলেন, নীতিমালা করার আগে অনেক অযোগ্য ব্যক্তি স্কুলগুলোতে ঢুকে পড়েছেন। তবে এদের অনেকেই আবার প্রতিবন্ধী। তাই বিষয়টি মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। নীতিমালার ধারা শিথিল করে তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাড়ছে শিশু পরিবারের নিবাসীদের ভাতা

সমাজকল্যাণ সচিব বৈঠকে বলেন, দেশে ৮৫টি শিশু পরিবারে ১০ হাজার ৩০০ জন নিবাসী আছে। নিবাসীদের জনপ্রতি মাসে ২ হাজার ৬০০ টাকা দেয়া হয়। তবে আগামী অর্থবছর থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দেয়া হবে। এই হিসাব ধরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাজেট করছে।

খণ্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে অসহায়দের চিকিৎসা

একই বৈঠক সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবীর বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় ২১১টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে এতিম পুনর্বাসনকেন্দ্র, সামাজিক প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠান, সেইফ হোম বেবিসহ মোট ১৫৭টি আবাসিক প্রতিষ্ঠানে ৮৫টি শিশু পরিবার রয়েছে। এসব আবাসিক প্রতিষ্ঠানে নিবাসীর সংখ্যা ১৯ হাজার। এই নিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য সবকটি প্রতিষ্ঠানে একজন করে খণ্ডকালীন চিকিৎসক ও কম্পাউন্ডার রয়েছেন। তবে জটিল রোগ হলে তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়।

কমিটির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, আয়েশা ফেরদাউস, মো. হাবিবে মিল্লাত, পীর ফজলুর রহমান এমপি, মো. আব্দুল মতিন, বেগম লুৎফা তাহের ও সৈয়দা সায়রা মহসীন এমপি অংশ নেন। মাঠপর্যায়ে সমাজসেবার সব কার্যালয়ে শূন্যপদ দ্রুত পূরণ এবং প্রাপ্যতারভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছে কমিটি।

এইচএস/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।