রাজধানীতে শতকরা ৯৯ ভাগই কিউলেক্স মশা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৮

মশার দৌরাত্ম্যে অস্থির নগরবাসী। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই বাসাবাড়িতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা প্রবেশ করছে। মশার কামড় ও ভনভন শব্দে স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। কয়েল জ্বালিয়েও মশা কমছে না। মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর অনেক পরিবারে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে মশার প্রকোপ বাড়লেও ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। কারণ রাজধানীজুড়ে মশার শতকরা ৯৯ ভাগই কিউলেক্স মশা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ-সিডিসি) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা রোববার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সম্প্রতি (১ মার্চ-৫ মার্চ) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৯টি অধিক মশকপ্রবণ এলাকায় তিন ধরনের মশার নমুনা- এডিস (ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকাবাহী), কিউলেক্স (ফাইলেরিয়াবাহী) ও এনোফিলিসের (ম্যালেরিয়াবাহী) ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, তিন ধরনের মশার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই কিউলেক্স মশা। কিউলেক্স মশায় ফাইলেরিয়া হলেও রাজধানীতে ফাইলেরিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই বলেই তিনি মন্তব্য করেন।

গত বৃহস্পতিবার (৮ মার্চ) সচিবালয়ে এক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে গৃহীত ব্যবস্থা ও রোগ দমনে করণীয় বিষয়ে বলেন, ‘পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিনই মশার যন্ত্রণা থাকবে।’

তিনি বলেন, মশাবাহিত দুই রোগ ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় এবারের প্রস্তুতি ভালো। আমি একটি কথা বলতে চাই মশার কারণে মহামারি তো দূরের কথা, ডেঙ্গু আক্রমণের কোনো আশঙ্কাই নেই এবার।’

ওই সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ সালাহউদ্দিন মশা নিধনের বাধা তুলে ধরে বলেন, শহরের ঢাকনাযুক্ত ড্রেন, বেশকিছু অপরিচ্ছন্ন ডোবায় মশা উৎপন্ন হচ্ছে। এসব স্থানে মশার ওষুধ ছিঁটানো যায় না।

উড়ন্ত মশা মারা কঠিন জানিয়ে শেখ সালাউদ্দিন বলেন, ড্রেনের পানির প্রবাহটা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে মশা জন্ম কম হতো।

গত ১ থেকে ৫ মার্চ যেসব এলাকায় জরিপ চালানো হয় সেগুলে হলো- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বনানী, বসুন্ধরা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগ (একাংশ), মিরপুর, মহাখালী, নাখালপাড়া, পূর্ব শ্যাওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মিন্টুরোড-বেইলি রোড, শান্তিনগর, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান, গুলবাগ, বাংলাবাজার ও মেরাদিয়া। এসব এলাকায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মাত্র ২৩ জন রোগী আক্রান্ত ও একজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে মিটফোর্ডে ৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬ জন, ইবনে সিনা ১ জন, স্কয়ারে ১ জন, কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২ জন, ইউনাইটেডে ৪ জন, ইউনিভার্সেলে ১ জন, সালাউদ্দিনে ২ জন ও পপুলারে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ জন ভর্তি হয়। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালে নার্গিস বেগম (৪৩) নামে এক ডেঙ্গু শকড সিনড্রোমে আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণকক্ষের ডা. ইমরুল জানান, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গত ২৫ ফেব্রুয়ারির পর আর কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্যে তাদের কাছে নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৭৬৯ জন ও মৃতের সংখ্যা ৮ জন।

এমইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।