সরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে
সরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ ২৭ শতাংশ। একই সঙ্গে প্রশাসনের নীতি-নির্ধারণী স্তরেও (উচ্চ পদে) নারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও গবেষণা সেলের ২০১৬ সালের প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রশাসনে নারীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬২ হাজার ২০৬ জন। এ সময়ে মোট সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৩ জন। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হার প্রায় ২৭ শতাংশ। যদিও এর আগের বছরও একই হার ছিল।
২০১৪ সালের প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮১ জন। এ সময়ে মোট সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংখ্যা ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩৮ জন। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হার ছিল ২৬ শতাংশ। এর আগের বছরের তুলনায় এ হার ২ শতাংশ বেড়েছে।
২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪৯ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৪ জন। নারীদের হার ছিল ২৪ শতাংশ। প্রশাসনের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পদ হচ্ছে সচিব। বর্তমানে প্রশাসনে সচিব রয়েছেন ৭৭ জন। এরমধ্যে মহিলা সচিব ৯ জন ও পুরুষ ৬৯ জন। নারীদের হার প্রায় ১২ শতাংশ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের ৫১৭ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৮১ জন, ৮১১ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে নারী ৯৯ জন, এক হাজার ৬৭২ জন উপসচিবের মধ্যে নারী ৩০৬ জন, এক হাজার ৪৩০ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৩৯৩ জন ও এক হাজার ১৯৩ জন সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৩৯৩ জন।
সিভিল সার্ভিসের নারীদের সংগঠন বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত সচিব) নাসরিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। শীর্ষ পদগুলোতেও বেশি সংখ্যক নারী উঠে আসছেন। তবে সংখ্যাটা আরও বাড়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এজন্য ইউমেন নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েরা যাতে আরও বেশি সিভিল সার্ভিসে আসতে পারে সেজন্য বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে অরিয়েন্টশন করছি। কীভাবে বিসিএস পরীক্ষাটা দিলে ভালো হয়, সেটা বলছি।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সচিব পদে প্রথম নারী নিয়োগ দেয়া হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। এরপর ১৯৯৯ সালে একজন, ২০০৩ সালে একজন, ২০০৭ সালে একজন, ২০০৯ সালে একজন, ২০১০ সালে একজন, ২০১১ সালে ২ জন নারীকে সচিব করা হয়। ২০১২ ও ২০১৩ সালে কোন নারী সচিব নিয়োগ দেয়া হয়নি। পরে ২০১৪ সালে ২ জন, ২০১৫ সালে ৩ জন, ২০১৬ সালে দুইজন, ২০১৭ সালে একজন ও ২০১৮ সালে এ পর্যন্ত একজন নারী কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বলেন, ‘প্রশাসনে নারীদের ক্ষমতায়নে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। আগের তুলনায় অনেক বেশি নারী সরকারি চাকরিতে আসছেন। আমরা চাই আরও বেশি নারী প্রশাসনে আসুক।’ ২০১৬ সালের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিসংখ্যান গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কর্মরত রয়েছেন ২৭ হাজার ৪৬০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪০ হাজার ৬৪০ জন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি নারী রয়েছেন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে, ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬২ জন। চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে নারীর সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৪৪ জন।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৪৭৫ জন। এর মধ্যে ৫ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬৮ জন পুরুষ এবং ৫ কোটি ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭ জন নারী। মোট ভোটারের মধ্যে অনুপাতে পুরুষ ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও নারী ৪৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
আরএমএম/ওআর/আরআইপি