ইচ্ছেটাকে আত্মবিশ্বাস করে এগিয়ে যেতে হবে
মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনে ইচ্ছেটাকে আত্মবিশ্বাসে পরিণত করে এগিয়ে যেতে পারলে সফলতার শেষ চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম। এ কারণে তারা সাত বোন ও তিন ভাই দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। নিজেদের মেধা-মনন দিয়ে সকলেই সুপ্রতিষ্ঠিত হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন। যদিও এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বাবা-মায়ের।
শাহানারা বেগম বলেন, কোনো কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না। অনেকে ছোট কাজ করেই জীবনে অনেক বড় হয়েছেন। অনেক নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে মহীয়সী নারী হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। তাই সব কাজের প্রতি সম্মান দেখানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। দেশে বর্তমানে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে। এ কারণে নারীরা তাদের স্বপ্নে পৌঁছাতে পারে না। এ প্রসঙ্গে শাহান আরা বেগম বলেন, বাল্যবিয়ে শহরের চাইতে মফস্বলে বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও বাল্যবিয়ের অনেক ঘটনা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। শিশু-কিশোর মেয়েদের উপর নানা রকম নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে করে ফুল ফোটার আগেই তাদের স্বপ্নগুলো ঝরে পড়ছে।
মেয়েদের বাল্যবিয়ের বড় কারণ অর্থনৈতিক সংকট, ইভটিজিং ও নিরাপত্তাহীনতা। এসব কারণে অভিভাবকরা মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বিষয়ে সকলের সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োজন। তবে আগের চেয়ে বাল্যবিয়ে কমেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মাধ্যমিক স্তরের মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝরে পড়ার বড় কারণ বাল্যবিয়ে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যা একটি বড় প্রভাব ফেলে। তাই অনেক মেয়ে এসএসসি পাস করার পর আর এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারছে না। ঘরে-বাইরে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বেশি।
তিনি বলেন, শুধু বিদ্যা অর্জন নয়, পাশাপাশি কাজ শেখাটাও প্রয়োজন। তবে কাজ শিখতে গিয়ে পড়ালেখা বাদ দিলে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই দু’টিকেই প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বর্তমানে সারাদেশে ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এটি পর্যাপ্ত কিনা জানতে চাইলে এই শিক্ষিকা বলেন, সরকার যে পরিমাণে বৃত্তি বা উপবৃত্তি দিয়ে থাকে তা পর্যাপ্ত নয়। এটি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পড়ালেখা করার জন্য শুধু বই-খাতা হলেই চলে না। আরও অনেক ব্যয় করতে হয়। অনেক অভিভাবক তা চালাতে না পেরে সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অর্জন করে শিক্ষকতা পেশায় আসেন শাহান আরা বেগম। সেবামূলক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন এমন প্রত্যাশায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী একজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার বাবা ছিলেন আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। মা গৃহিনী।
এমএইচএম/ওআর/আরআইপি