ইসিতে না থাকা প্রতীকও চেয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) না থাকা প্রতীকও নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে চেয়েছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতীক বরাদ্দ দেয়া নীতি বিরুদ্ধ হলেও মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফও প্রতীক হিসেবে চেয়েছে একটি দল। আর অন্য দলের প্রতীকসহ বড় প্রধান দলগুলোর মতো দেখতে এমন প্রতীকও চেয়েছে কেউ কেউ। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দল নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে চেয়েছে সিংহ।

ইসিতে নতুন নিবন্ধন চাওয়া দলগুলোর কাগজপত্র ঘেটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিবন্ধন চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে ৭৬টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বলে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাগো নিউজকে জানিয়েছেন।

জানা যায়, দাঁড়িপাল্লার মতো ধর্মীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে না বলে ইসি আইন করেছে। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করে আল-কোরআন প্রতীক চেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামীক গাজী নামের নিবন্ধন চাওয়া একটি দল। চাঁদ প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ শান্তির দল। এমনকি বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মতই দেখতে গমের শীষ ও গমের ছড়া চেয়েছে একাধিক দল। বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রতীক চায়। তবে তৃণমূল কংগ্রেস গমের শিষ না পেলে পাঞ্জা প্রতীক বিকল্প হিসেবে চেয়েছে। অথচ বিএনপির তীব্র প্রতিবাদের পরও বিগত কমিশন বিএনএফ নামে একটি রাজনৈতিক দলকে এই প্রতীক বরাদ্দ দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইপি মহাসচিব মো. আবুল কাশেম বলেন, আমরা ভেবেছিলাম প্রতীকটি বরাদ্দ নেই। তাই চেয়েছি। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। সুযোগ থাকলে প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আবেদন করবো।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা সাদৃশ্য পানির জাহাজ চেয়ে আবেদন করেছে লিবারেল পার্টি-এলপি। পানির জাহাজ প্রতীক কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় নেই। তাছাড়া এটি আওয়ামী লীগের প্রতীকের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এম ইরফান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা কমিশনের শর্ত পূরণ করে আবেদন করেছি। দলীয় প্রতীক চেয়েছি পানির জাহাজ। নৌকা প্রতীকের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও আমরা এটি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

সিংহ প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন ও বাংলাদেশ সমাজ উন্নয়ন পার্টি (বিএসডিপি)। মোবাইল প্রতীক চেয়েছে বাংলাদেশ আলোকিত পার্টি ও জনস্বার্থে বাংলাদেশ। পালকী প্রতীক চেয়েছে বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি)। তৃণমূল ন্যাশনাল পার্টি ও বাংলাদেশ সততা দল (বিএইচপি) নামে দুটি দল প্রতীক আনারস চেয়েছে। বাংলাদেশ কংগ্রেস চেয়েছে বই অথবা নাকফুল। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ চেয়েছে তালগাছ।

বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি চেয়েছে সোনালী আঁশ/পাট গাছ। বঙ্গবন্ধু দুঃস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ চেয়েছে হুইল চেয়ার। কুড়াল/হারিকেন প্রতীক চেয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ। ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ ঠেলাগাড়ি, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কে এস পি) সাইকেল, রিকশা প্রতীক চেয়েছে গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী)। রেলগাড়ি প্রতীক চেয়েছে গণসংহতি বাংলাদেশ। ঝাড়ু প্রতীক চেয়েছে বাংলাদেশ ঘুষ নির্মূল পার্টি (বি জি এন পি)।

বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ভাসানী ন্যাপ, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন (বি এম এ), সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগসহ বেশ কয়েকটি দল কোনো প্রতীক চায়নি।

ইসির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য ৬৪টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের। বাকি ২৪টি প্রতীক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। নতুন দলের নিবন্ধন দেয়া হলে তাদেরকে এখান থেকেই প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

নিবন্ধিত দলের বাইরের ২৪টি প্রতীক হলো- আপেল, একতারা, কলার ছড়ি, কুমির, কুড়াল, খাট, ঘণ্টা, ট্রাক, ডাব, তবলা, তরমুজ, দাবাবোর্ড, দালান, নোঙ্গর, ফুলকপি, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মটরগাড়ি (কার), মাথাল, রকেট, শঙ্খ, সিংহ, ও স্যুটকেস। কিন্তু এই প্রতীকের বাইরেও অনেকে অন্য প্রতীক বরাদ্দ চেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে ইসির যুগ্ম-সচিব মো. আবুল কাসেম জাগো নিউজকে বলেন, কেউ চাইলেই বিতর্কিত কোনো প্রতীক দেয়া হবে না। এছাড়া কমিশনের প্রতীকের তালিকার বাইরের কোনো প্রতীক দেয়ার সুযোগ আপাতত নেই। তবে প্রতীকের চেয়ে দল বেশি হয়ে গেলে ইসি নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে।

ইসি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে নতুন দলের আবেদন যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটি। এছাড়া এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন-নিরাপত্তা বিভাগের সচিবের কাছে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। প্রথম বছরে ১১৭টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।

এছাড়া ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে নতুন একটি দলের নিবন্ধন দেয়া হয়। বর্তমানে ইসির নিবন্ধনে ৪০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।

এইচএস/এআরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।