কর ফাঁকিতে ফেঁসে যাচ্ছে ওয়াসা

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৯:৪০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

১৭৭ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দিয়ে কর ফাঁকির কারণ জানতে চায় এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) শাখা। কিন্তু ওয়াসার জবাব না পেয়ে ফাঁকি দেয়া অর্থ দ্রুত পরিশোধে চূড়ান্ত দাবী নামা জারি করেছে এনবিআর।

সম্প্রতি এনবিআরের আওতাধীন এলটিইউ-মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) শাখা থেকে ওয়াসাকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ওয়াসা বলছে, এনবিআরের সঙ্গে কোথাও ভুল বুঝাবুঝি হচ্ছে। কোনো ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়নি।

ওয়াসাকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূসক, নিবন্ধিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩-১৫ সাল তিন বছরে গ্রাহকের কাছ থেকে মূসক নেয়ার পরও তা পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটি বিলিং পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করে থাকে। সেবামূলক হলেও বর্তমানে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান।

মূসক আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৫-এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী সেবার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মোট প্রাপ্তির (আয়) ওপর ভ্যাট বা মূসক ধার্য হবে। এ ছাড়া ধারা-৬-এর উপ ধারা (৪কক) এবং বিধি-১৮ক অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ওপর উৎসে মূসক প্রযোজ্য। তারা গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও তা সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি।

সূত্র জানায়, ঢাকা ওয়াসার ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব তলব করেছিল এলটিইউ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো তথ্য দেয়নি। পরে ওয়াসার ওয়েবসাইট থেকে অডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করেন ভ্যাট কর্মকর্তারা। সে রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়।

অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে ৮৫৬ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৭ টাকা আয় করেছে। ১৫ শতাংশ হারে এ আয়ের ওপর প্রযোজ্য মূসকের পরিমাণ ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৪ টাকা ৫৫ পয়সা। একই অর্থবছর উৎসে মূসকযোগ্য সেবামূল্য ২৬৫ কোটি ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৪১ টাকা ৩৫ পয়সা। এ সেবা মূল্যের ওপর উৎসে মূসকের পরিমাণ ৭৫ কোটি ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৩ টাকা ৩ পয়সা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওয়াসা পানি সরবরাহ বা সেবার মাধ্যমে আয় করেছে ৯১১ কোটি ১৫ লাখ ৫২ হাজার ৯১২ টাকা। ১৫ শতাংশ হারে এ আয়ের ওপর প্রযোজ্য মূসক ১৩৬ কোটি ৬৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৬ টাকা ৮০ পয়সা। একই অর্থবছর উৎসে মূসকযোগ্য সেবা মূল্য এক হাজার ১৬০ কোটি ৮১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। এ সেবা মূল্যের ওপর উৎসে মূসকের পরিমাণ ১০১ কোটি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৩ টাকা ৬৪ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা ওয়াসা ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ভ্যাট সার্কেলে (বিভাগীয় কর্মকর্তা, মূসক বিভাগ-৪, এলটিইউ) দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) ২৬৪ কোটি ৭৭ লাখ ৩৫ হাজার ৪২৮ টাকা ৭৮ পয়সার ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। সে মোতাবেক দুই অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি মোট মূসক ও উৎসে মূসক বাবদ ১৭৬ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৯ টাকা ২৫ পয়সা ফাঁকি দিয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যাবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম খান বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, এর আগেও তারা চিঠি দিয়েছিল। আমরা জবাব দিয়েছে। বাস্তবতা হলো ওয়াসার আয় জমা হয় রাজস্ব খাতে। এর একটি অংশ ভ্যাট বাবদ এনবিআরের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। কিন্তু কিভাবে তা মিসিং হলো সেটা জানা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চূড়ান্ত দাবী সংক্রান্ত চিঠির কথা শুনেছি। নিশ্চয় আমাদের অ্যাকাউন্টস থেকে এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএ/এএইচ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।