সরকারের গতিশীল অর্থনীতি

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:১১ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৮

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণই বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার দারিদ্র্য নিরসন এবং বৈষম্য দূর করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় গত ৯ বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য এসেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকারের আন্তরিকতার ফলে মাথাপিছু আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর হতে ১৪৫ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১,৬১০ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বর্তমান সরকার প্রধানের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আমরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে বাজেটের আকার, মাথা পিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয় ইত্যাদি লক্ষ্য করলেই যে কেউ তা বুঝতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সরকার দেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। রফতানি আয় ৩৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আমদানি প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে এবং অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাজস্ব ও মুদ্রাখাতে অনুসৃত নীতির ফলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের আকার চার লাক ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রশাসনিক ও ডিজিটাল সংস্কার সাধন এবং কর-নেট সম্প্রসারণ ও করদাতা নিবন্ধনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে পরপর তিন অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে, যার প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৯ শতাংশ। করদাতাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ইনকাম ট্যাক্স আইডি কার্ড প্রবর্তন এবং পরিবারের সকল সদস্যকে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে ‘কর বাহাদুর’ খেতাব প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯১৬টি, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশের বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আয়কর রিটার্নের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংক খাত বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তার অর্জিত প্রতিশ্রুত এবং অর্থ ছাড় যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৯৬ এবং ৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ইতিপূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে এবং স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এটিই সর্বোচ্চ। গত ৫ অর্থবছরে মোট ৪১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ সময়ে মোট ১৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের আওতাধীন আটটি ইপিজেড-এ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ৪৬৮টি শিল্প চালুর মাধ্যমে পুঞ্জীভূত রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিনিয়োগ হয়েছে চার হাজার ৫০১ দশমিক ০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চার লাখ ৮৬ হাজার ৬৮১ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর জমির ওপর ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে আরও যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’প্রণয়ন করা হয়েছে। হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ২০১০-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬-সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ হার যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দেশীয় শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ দূষণরোধে রাজধানীর হাজরীবাগস্থ ট্যানারিসমূহকে সাভারে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০০ একর জমিতে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো জানায়, চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা খাতে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের রফতানি বাণিজ্যে পণ্য বহুমুখীকরণ কার্যক্রমের আওতায় সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্প, ফার্নিচার শিল্প, ঔষধ, আইসিটি ইত্যাদি পণ্য উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টা ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৯ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

ব্যুরো আশা করছে, ২০২১ সালে এ খাতে রফতানি আয়ের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

এফএইচএস/এএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।