বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারেনি
আ ক ম মোজাম্মেল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা। মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার মতো বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা এবং চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে মত দেন। তবে এ সময়ে যুদ্ধপরাধের বিচার বড় একটি অর্জন বলে মনে করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ : স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ। কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্খা নিয়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি, তা থমকে যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এদিন থেকেই দেশের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়ে পেছনের দিকে হাঁটার প্রয়াস চলে।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ধর্মের উপর ভর করে পাকিস্তানি ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। একই ধারায় আরেক সামরিক সরকার এরশাদও বাংলাদেশের রাজনীতিকে নানাভাবে কলুষিত করতে থাকেন। এদিকে গণতান্ত্রিক ধারায় দু’বার বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। যে কারণে দীর্ঘ ৪৬ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারেনি।
জাগো নিউজ : যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধে গেলেন, তা পূরণ হয়নি বলছেন। জীবনের এ সময়ে এসে আজকের বাংলাদেশ কতটুকু ভাবায়?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : যে বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, তা এখনও অদূরে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ভাবনা সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়। তবে বাংলাদেশ তার পথ হারায়নি। বিভ্রান্তি হয়েছে, ভুল পথে চলার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সঠিক পথে আবার ফিরে আসার চেষ্টাও হয়েছে। আজ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা তার বাবার দেখানো পথে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর।
জাগো নিউজ : যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। শীর্ষ অপরাধীরা সাজাও পেল। এ অর্জন নিয়ে কী বলবেন?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু, তার কন্যা শেখ হাসিনা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করে চলছেন। সাজা কার্যকরও হয়েছে এবং হচ্ছে। আজ পুরো জাতি আনন্দিত, উল্লসিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের ঘটনায়। একজন মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে আমি মনে করি, এরই মধ্য দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেল। বিচারহীনতা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছে সরকার। বিচারে কয়জনের ফাঁসি হলো সেটা বড় কথা নয়, এটি হচ্ছে আদর্শের লড়াই। এমন লড়াইয়ে টিকতে হলে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেই হয়।
জাগো নিউজ : অন্য অপরাধীদের ব্যাপারে কী বলবেন?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : ঘটনার অনেক পরে বিচার হচ্ছে। অনেক অপরাধী মারা গেছেন। অনেকের বয়স এমন যে, তাদের বিরুদ্ধে বিচার সম্পন্ন করাও যাচ্ছে না। অনেক সাক্ষীও নেই। যারা আছেন তারাও আদালতে এসে বয়সের ভারে কথা বলতে পারছেন না। এই অবস্থায় বিচার সম্পন্ন করা নিয়ে প্রশ্ন অনেকে তুলতেই পারেন। তবে সরকার এ ব্যাপারে শতভাগ আন্তরিক। এ বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একজন অপরাধীও যদি থাকেন এবং তার বিরুদ্ধে যদি যথাযথভাবে সাক্ষী প্রমাণ মেলে সেও এ বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবেন না।
জাগো নিউজ : যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি ওঠছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে কী?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : জামায়াতের অপরাধ সম্পর্কে দেশ-বিদেশের সবাই অবহিত। ট্রাইব্যুনালও বারবার জামায়াতকে অপরাধী দল হিসেবে বিবেচনা করছে।
জাগো নিউজ : তাহলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করছে না কেন?
আ ক ম মোজাম্মেল হক : জামায়াত নিষিদ্ধ সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে সেটা আদালতের মধ্য দিয়েই হবে। আমরা চাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করছে, আদালতই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
এএসএস/আরএস