গাঁজার টানে ৩৩ বছর

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কুষ্টিয়া থেকে
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

নিখুঁত হাতে একজন গাঁজা কাটছেন। ছোট কাঠের গুঁড়িতে ধারালো বাটলের কোপে মিহি রূপ নিচ্ছে গাঁজার পাতাগুলো। আরেকজন তা হাতের তালুতে নিয়ে পিষছেন। অন্যজন নারিকেলের ছোবড়া কেটে তাতে আগুন লাগিয়ে কুণ্ডলি বানাচ্ছেন। অন্যজন মাটির কল্কে ধরে বসে আছেন।

মধ্যখানে মোমের বাতি। চারপাশ থেকে ভেসে আসছে আগরবাতির মনকাড়া গন্ধ। আসরের মধ্যখানে বিশেষ আসন (বসার জন্য নয়) পাতা। আসন ঘেঁষেই যোগাসনে বসা সিদ্ধি (গাঁজা) সেবক আমানউল্লাহ। আসরের কেন্দ্রে তিনিই।

সোমবার সন্ধ্যা শুরুর লগ্ন। ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি থেকে তখন লালনের গান মাইকে ভেসে আসছে। কুষ্টিয়া শহরের উত্তর পাশের গড়াই নদীর তীরে ঝোপ-জঙ্গল থেকে শিয়ালরাও পাল্লা দিয়ে হুক্কাহুয়া করছিল। নদীর তীর ঘেঁষেই শ্মশানঘাট। আর সেখানেই বসেছে গাঁজার হাট।

gaza

লালনের মেলা উপলক্ষে প্রতি বছরই এই শ্মশানঘাটে গাঁজাসেবীদের আসর বসে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। যারা মেলায় আখড়াবাড়ির ভিড়ে গাঁজা সেবন পছন্দ করেন না অথবা নিছকই গাঁজা সেবনের জন্য মেলায় আসেন, তাদেরই ঠিকানা শ্মশানঘাট। হাজার হাজার গাঁজাসেবক আসর বসায় গড়াই তীরের এ শ্মশানঘাটে।

শ্মশানঘাটের বিশেষ শোভা বাড়িয়েছে সুবিশাল বট গাছ। গাছের গোড়া শানবাঁধা। তার ওপরই সিদ্ধিসেবক আমান উল্লাহ আসর বসিয়েছেন। যারা কলকি সাজাচ্ছেন, তারা শানের ওপর বসা। আর অন্য ভক্তরা নিচে। মেলা শুরুর দুদিন আগে থেকেই গাঁজার পসরা নিয়ে বসেছেন আমান উল্লাহ। থ্রি-কোয়ার্টার ধরনের একটি প্যান্ট পরা। শরীরের উপরের ভাগ উদাম। পাকা চুলের পেছনের ভাগে জট ধরেছে। দাড়ি-গোঁফে কোনো আমলে ক্ষুর পড়েছিল, হয়তো তা তারও মনে নেই। নাকের কাছে গোঁফে লালচে রঙ ধরেছে গাঁজার ধোঁয়ায়। লালচে চোখ ঘুমে যেন ঢুলুঢুলু করছে।

গাঁজা সেবনে মুন্সিয়ানায় কোনো তুলনা হয় না আমান উল্লাহর। গাঁজার সব ধোঁয়া গিলে ফেলতে পারেন তিনি। ভাত না হলে চলে, তবে গাঁজা না হলে চলে না। ভাত না খেয়ে টানা তিনদিন গাঁজা টেনেই পার করতে পারেন এ আসক্ত বৃদ্ধ।

gaza

আমান উল্লাহর জন্ম ঢাকার লালবাগ কেল্লার মোড়ে। বিয়ে করেছিলেন। সংসারে কে কে, সংসার কীভাবে চলে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেন না।

বলেন, ‘সব মওলার ইশারায় চলছে। ২৭ বছর বয়স থেকে গাঁজা হাতে নিয়েছি। আর ছাড়তে পারি নাই। এখন প্রায় ৬০ বছর। মরণের আগে আর ছাড়তেও পারব না। গাঁজাতেই এখন আমার সাধন-ভজন।’

মাজারে মাজারেই দিন কাটে উল্লেখ করে বলেন, সারাদেশে অসংখ্য ভক্ত আমার। আমার কাছ থেকে অনেকেই গাঁজা খাওয়ার কৌশল রপ্ত করেছেন। গাঁজা কিনতে এখন আর টাকাও লাগে না আমার। ভক্তরাই সেবা দেয়।

এএসএস/একে/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।