কমিটি আছে, কমিটি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৭

এক বছর পার হতে চলল, আংশিক কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপ নিতে পারেনি। যে আশা নিয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন সেই আশায় যেন গুড়েবালি। সংগঠনটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে দলে দলে নেতাকর্মী মহানগর বিএনপি ও যুবদলে ভিড়ছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীদের সমন্বয়ে সংগঠনটি গড়ে তোলা হবে। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, মহামারিসহ যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করবে। কোনো কাজেই তারা ব্যর্থ হবে না। অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হবে, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে এগিয়ে যাবে।’

যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে সংগঠনটির গঠন, সেটি যেন পদে পদে ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখছে। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি এবং আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বলা হয়, শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে চাঙ্গা করা হবে সংগঠনটি। কিন্তু এক বছর পার হতে চলল, পূর্ণাঙ্গ কমিটির আলোর মুখ এখনও দেখা যায়নি। ফলে সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা উপায়ন্তর না দেখে মহানগর বিএনপি ও যুবদলের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি এখনও চোখে পড়েনি। আদৌ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কি না- তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।

২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ঘোষিত আংশিক কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মোস্তাফিজুর রহমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

এর আগে শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আর ইয়াসিন আলী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ছিলেন।

২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি, মীর শরাফত আলী শপুকে সাধারণ সম্পাদক ও শফিউল বারী বাবুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আংশিক কমিটি করা হয়। এর প্রায় এক বছর পর ২০১০ সালের ২১ আগস্ট ৩৩৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে সোহেলকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং শপুকে স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বাবু-জুয়েল স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপ দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু এখনও তারা সবকিছু গুছিয়ে আনতে পারেননি। নানা জটিলতায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকাও তৈরি করতে পারেননি তারা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ভাইনির্ভর বিএনপির রাজনীতিতে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল স্বেচ্ছাসেবক দল ছেড়ে ঢাকা মহানগরে নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় তার অনুসারীদের অনেকেই মহানগর বিএনপিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর যদিও সোহেল একটি ইউনিটেরও কমিটি গঠন করতে পারেননি।

অন্যদিকে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ায় তার অনুসারীরা যুবদলমুখী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য নেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

পাশাপাশি নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর কোরাম থেকেই বাবু ও জুয়েলকে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনটির শীর্ষ দুটি পদে আসীন করায় অন্য কোরাম থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিতে আগ্রহীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা বলেন, কমিটি ঘোষণার আগে স্বেচ্ছাসেবক দলে থেকে রাজনীতি করার আগ্রহ থাকলেও এখন তিনি যুবদলের কমিটিতে পদ পেতে চেষ্টা করছেন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের অগ্রগতি সম্পর্কে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। ম্যাডাম দেশে ফিরলে আলোচনা করে কমিটি দেয়ার চিন্তা করছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পাশাপাশি জেলা কমিটি নিয়েও কাজ চলছে।

‘শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে’ জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ম্যাডাম দেশে ফিরলে কমিটি ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরফত আলী শপু বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে সময়সীমা বলতে পারছি না। তবে ম্যাডাম আসলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। আমি যতদূর জানি, প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি এ নিয়ে কাজ করছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালের ১৯ আগস্ট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজী সিরাজকে (সংস্কারপন্থী হিসেবে বর্তমানে দল থেকে বাদ পড়েছেন) আহ্বায়ক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করেন। ১৯৮৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদকে আহ্বায়ক করে ২৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ সালের ১০ মার্চ রুহুল কবির রিজভীকে সভাপতি ও ফজলুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিট গঠন করা হয়।

এমএম/এমএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।