ছাত্রলীগের উদ্যোগে সুস্থতার পথে জামালপুরের গামা

মাহাবুর আলম সোহাগ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ১১:৩৭ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

প্রায় তিন যুগ ধরে পায়ের উরুতে মাংসপেশি বেড়ে কর্মক্ষম হয়ে পড়েছিলেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রিয়াজুল করিম গামা। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটি বেকার হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে তার পরিবারকে।

অবশেষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সার্বিক সহযোগিতায় এখন সুস্থতার পথে গামা। গত মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন-প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারি বিভাগের অধীনে ভাস্কুলার সার্জারি ও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট'র সহযোগিতায় তার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় তার রোগটির নাম Plexiform Neurofibromatosis.

পর্যায়ক্রমে তার মাথা ও পিঠেরও অপারেশন হবে বলে জানালেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল হোসেইন শুভ।

তিনি জানান, অপারেশনের পর ভালো আছেন গামা ভাই। আমরা প্রতিনিয়ত তার খোঁজখবর রাখছি। গামা ভাইয়ের চিকিৎসার পুরো অবদান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের। মূলত তার উদ্যোগে এই কাজটি হয়েছে। তার মানবিকতায় গামা ভাইসহ দেশের অসংখ্য অসুস্থ অসহায় গরিব কিশোর-কিশোরী আজ সুস্থভাবে জীবনযাপন করছে।

gama

শুভ জানান, গামা ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ডা. কাজী মাহবুব ভাই, জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সন্ধানীর ইউনিটকে ধন্যবাদ। কারণ, তারাও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।

এ ব্যাপারে রিয়াজুল করিম গামা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার জন্য যা করেছে তা আজীবন মনে থাকবে আমার। তাদের চেষ্টায় সুস্থ হয়ে উঠব ইনশাল্লাহ। দোয়া করবেন আমার জন্য।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ‘বেড়েই চলেছে গামার পায়ের মাংসপেশি’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেইনের দৃষ্টিতে পড়ে। বিষয়টি তিনি জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককের অবগত করেন এবং দ্রুত ওই রোগীকে ঢাকা পাঠানোর জন্য বলেন।

উল্লেখ, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ি গ্রামের রিয়াজুল করিম গামার (৪৭) ডান পায়ে ১৯৮৩ সালে প্রথম এই রোগ দেখা দেয়। শুরুর দিকে গামার ডান পায়ের উরুতে মাংস বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি দরিদ্র পরিবার গুরুত্ব না দিলেও বছরের পর বছর সেই মাংস বেড়ে ঝুলে পড়তে থাকে। ওই সময় চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখালেও এই রোগ নির্ণয় করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

gama

দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় গামার পায়ের মাংসপেশি দিন দিন বেড়ে ঝুলে যাওয়ার পাশাপাশি মাথা এবং সারাদেহে এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়েছে।

বর্তমানে কর্মক্ষম অবস্থায় স্ত্রী শিলা বেগম (৩২) আর তিন সন্তান শামসুল হক (১৩), মেয়ে রাফিয়া সুলতানা (১০) এবং জান্নাতুল ফেরদৌসীকে (২) নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে গামাকে।

বড় ছেলে শামসুল হক স্থানীয় নতুন কুঁড়ি বিদ্যাপীঠ নামক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে এবং মেয়ে বানিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

আর্থিক সংকটে সন্তানদের লেখাপড়া এবং সংসারের খরচ জোগান দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে তার। দিন যতই যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন গামা। তবে পরিবারের সদস্যদের আশা গামাকে উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে সুস্থ হয়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।

এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।