খুচরা বাজারে চালের দাম কমবে, তবে...

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সরকারের ব্যাপক তোড়জোড়ের পর পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। কিন্তু এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না খুচরা বাজারে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম কমবে, তবে একটু সময় লাগবে।

রাজধানীর মিরপুর, তালতলা, শান্তিনগরের খুচরা ব্যবসায়ীরা চালের দাম কমার বিষয়ে আশাবাদী। তারা বলছেন, চালের দাম গত চার-পাঁচদিন বাড়েনি। আবার দাম কমেওনি। ঈদের পর হুট করে যে দাম বেড়েছিল ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।

ব্যবসায়ীদের মতে, খুচরা বাজারে চালের দাম কমতে একটু সময় লাগবে। পাইকারিতে কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব একটু দেরিতে পড়ে। কারণ দাম বাড়ার সময় যেভাবে বাড়ে, কমার সময় সেভাবে কমে না।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর চালের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে চালের দামের মধ্যে তারতম্য রয়েছে। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৯ টাকায়, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৬ টাকায়। নাজিরশাইল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৬ টাকায়, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৭০ টাকায়।

রাজধানীর বাবুবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি বাজারে আটাশ চাল ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, একই চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়। ঊনত্রিশ চাল পাইকারি বাজারে ৫০-৫২ টাকা, খুচরা বাজারে ৫৫-৫৬ টাকায়, স্বর্ণা পাইকারিতে ৪৫-৪৬ টাকা, খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকায়। মোটা চাল (হাইব্রিড) পাইকারি বাজারে ৪২-৪৩ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ‘পাটোয়ারী স্টোর’র নান্টু পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুরের পাইকারি আড়তগুলোতে চালের দাম কমেনি। ফলে খুচরা বাজারে চালের দাম কমার প্রশ্নই আসে না। পাইকারি বাজারে হুট করে চালের দাম বাড়ানোর কারণে খুচরা বিক্রিতে দাম বাড়াতে হয়েছে। কেউ তো লস করে ব্যবসা করবে না।

‘টিভিতে বা পত্রপত্রিকায় দাম কমছে বলে শুনছি কিন্তু আমাদের কাছে ডিলাররা তো এক টাকাও কম নিচ্ছে না। আমরা কীভাবে দাম কমাব’- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

‘ডেইলি মার্ট’র মালিক শাহাদত হোসেন বলেন, ঈদের পর মাত্র তিনদিনের মাথায় পাইকারি আড়তদাররা কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা করে দাম বাড়িয়েছেন। এরপর ধাপে ধাপে আরও দাম বাড়ান। এ কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, শুধু আড়তদারই নয়, অনেক খুচরা ব্যবসায়ীর কাছেও ঈদের আগে কেনা চাল আছে। তারা বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন পাঁচ-সাত বস্তা চাল কিনে বিক্রি করতে হয়। আড়তদাররা যে দাম রাখে তার সঙ্গে বাড়তি লাভ ধরে আমাদের বিক্রি করতে হয়।

‘চালের দাম খুচরা বাজারে কমতে আরও সময় লাগবে। পাইকারি বাজারের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়তে সময় লাগে অন্তত ১৫ দিন’- যোগ করেন শাহাদত হোসেন।

বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সমাজের দরিদ্র মানুষের আয়ের ৬০ শতাংশ চলে যায় খাবার সংগ্রহে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে আসবে। এ অবস্থায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সম্প্রতি বাবুবাজারের ‘জনপ্রিয় রাইস এজেন্সি’র পরিচালক টগর আহাম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। এর পেছনে দুটি কারণ। একদিকে ওএমএস চলছে, অন্যদিকে সরকার অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান অব্যাহত থাকলে চালের দাম দু-তিনদিনে আরও কমে আসবে।

চালের দাম কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখন যেসব আমদানি চুক্তি হয়েছে, সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেলিভারি (সরবরাহ) নিতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি থাকলে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক, তবে ব্যবসায়ীদের বোঝাতে হবে শুধু মুনাফার চেষ্টা না করে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে নজর রেখে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা।

মজুতের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এ ধরনের অভিযানের ব্যাপারে আমি খুব বেশি পক্ষপাতি না। কারণ এটি করতে গেলে দেখা যাবে মজুতদাররা অন্য গোডাউনে মাল সরিয়ে ফেলবে। ফলে সরবরাহের ওপর আরও বেশি চাপ পড়বে। কাজেই যতদূর সম্ভব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং কিছুটা ভয় দেখিয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।

ব্যবসায়ীদের চাল মজুতের বিষয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করার আশায় মানুষ মজুত রাখে। আর ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে- এই প্রত্যাশা তখন আসে যখন চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান দেখা দেয়। কাজেই সরকারের স্টক বাড়ানো এবং আমদানির ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সরকারের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।

এমএ/এমএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।