কাগজে-কলমেই ১ কোটি টন চালের মজুত
দেশে চালের মজুত এক কোটি টন- এমন দাবি করে আসছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। কিন্তু এ মজুত কোথায়, কীভাবে আছে- সেটার কোনো স্পষ্ট হিসাব নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনের হিসাবে চালের মজুতের কথা বলাটা যথাযথ নয়। কারণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে কী পরিমাণ চাল আছে সেটাই মুখ্য। এর বাইরে ব্যবসায়ীদের কাছে চাল আছে, বাজারে ছাড়ছে না- এটা দায়সারা অভিযোগ।
খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি গুদামজাতকৃত মোট খাদ্যশস্যের মজুত চার লাখ ৭৩ হাজার টন। এর মধ্যে চাল তিন লাখ ৫৬ হাজার টন এবং গম এক লাখ ১৭ হাজার টন। এছাড়া বিভিন্ন বন্দরে ভাসমান অবস্থায় এক লাখ ১১ হাজার টন খাদ্যশস্য রয়েছে।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি টন মজুতের কথা বলা হচ্ছে। তা কোথায় এবং কীভাবে আছে তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজ’কে বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ টন ধান-চাল উৎপাদন হয়৷ দেশে খাদ্য চাহিদা রয়েছে তিন কোটি টনের মতো৷ বাকি প্রায় ৬০ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে৷
তিনি বলেন, এর আগে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। আমরা সরকারিভাবে ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করেছি৷ এরপরও এবার চালের সঙ্কট হয় কী করে? আমার মনে হয়, কৃত্রিম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের কাছে চালের মজুত কম আছে বলেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ব্যবসায়ীদের কাছে কী পরিমান মজুত আছে, সে হিসাব করে লাভ নেই। কারণ সেটা শুধু ধারণার ওপর বলা যায়। সঠিক হিসাবে এটা নাও থাকতে পারে।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে চালের মজুত নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিলেন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা। সারা দেশে এক কোটি টন চাল মজুত আছে বলে খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী দাবি করলেও এটি ভিত্তিহীন বললেন ব্যবসায়ীরা। এ পরিমাণ চাল মজুত থাকলে তার সপক্ষে প্রমাণ চান ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চালের ব্যাপারে সরকার দূরদর্শিতার অভাব দেখিয়েছে। কারণ জুন মাসেই দেখা গেছে সরকারের নিজস্ব স্টক (মজুত) অনেক বড় মাত্রায় কমে গেছে। এরপর বন্যার আভাস তো আগে থেকেই ছিল। বন্যায় যখন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলো তখনও সরকার নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে সরকার আমদানিতে গেছে। আমদানির কিছু কন্ট্রাকও (চুক্তি) হয়েছে।
চালের দাম কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন যেসব আমদানি চুক্তি হয়েছে, সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেলিভারি (সরবরাহ) নিতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি থাকলে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক, তবে ব্যবসায়ীদের বোঝাতে হবে শুধু মুনাফার চেষ্টা না করে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে নজর রেখে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা।
মজুতের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এ ধরনের অভিযানের ব্যাপারে আমি খুব বেশি পক্ষপাতি না। কারণ এটি করতে গেলে দেখা যাবে মজুতদাররা অন্য গোডাউনে মাল সরিয়ে ফেলবে। ফলে সরবরাহের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি হবে। কাজেই যতদূর সম্ভব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং কিছুটা ভয় দেখিয়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
এমএ/এমএআর/পিআর