আরও ৫ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০০ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর এলাকায় হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে বিপুল এলাকার বোরো ধানের জমি তলিয়ে যাওয়া এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অকাল বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ব্লাস্টরোগ ও সাম্প্রতিক বন্যায় এবার চালের উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ায় এর প্রভাবও পড়তে শুরু করে বাজারে। বর্তমানে চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

বিষয়টি দেরিতে হলেও অনুধাবন করে সরকার। বেসরকারি আমদানিকারকদের সুবিধা দিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া সরকারিভাবেও বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরে চালের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। উৎপাদনও কম হয়েছে। এ কারণে চালের ঘাটতি মেটাতে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) প্রক্রিয়ায় ১৫ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য নিয়ে দেশে দেশে ছোটেন স্বয়ং খাদ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে নয় লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। আরও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি চূড়ান্ত করতে এ মাসেই বাংলাদেশ আসছে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দল। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ভিয়েতনামের সঙ্গে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পন্ন করেছে সরকার। চালের সরবরাহও শুরু হয়েছে। কম্বোডিয়ার সঙ্গে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া গত সোমবার মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পন্নসহ মোট নয় লাখ টন চাল আমদানির (জি টু জি) চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।

ইতোমধ্যে দুই লাখ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। দেড় লাখ টন চাল আসছে (রাস্তায়)। আগামী অক্টোবর মাসে আরও আসবে তিন লাখ টান। বাকি আড়াই লাখ টন চাল ১২ নভেম্বরের মধ্যে চলে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জি টু জি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে আরও পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। চালের দাম ঠিক করতে ২৪ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনাম এবং ২৬ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। তারা খাদ্য সচিবের নেতৃত্বে জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করবে। দরদামের বিষয়ে উভয় দেশ একমত হলে চুক্তি সই হবে।

এর আগে ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চাল আমদানির বিষয়ে যোগাযোগ ও আলোচনা হয়। কিন্তু ওই দুই দেশের সঙ্গে চালের দর নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় আলোচনা ব্যর্থ হয়। তবে মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হলে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে চাল দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ভারতও আগ্রহ দেখায়।

এদিকে, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘পিইসি’ বাংলাদেশকে চাল দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। শিগগিরই ভারতের সঙ্গেও চাল আমদানির বিষয়ে চিঠি লেখা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসাইন বলেন, চলতি বছর জি টু জি পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত নয় লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। আরও বেশকিছু চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণভাবে আট লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পেরেছেন মাত্র আড়াই লাখ টন।

অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানের ব্যর্থতার কথা নিজেও স্বীকার করেছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তবে এজন্য তিনি দায়ী করেন বন্যা পরিস্থিতিকে। গত ১৬ আগস্ট সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এবার এক কোটি ৯১ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, হাওর ও অন্যান্য এলাকার বন্যায় তা অর্জিত হচ্ছে না। সাত লাখ টন ধান ও আট লাখ টন চাল সংগ্রহের যে পরিকল্পনা করেছিলাম, সেটাও কিনতে পারিনি।

সংগ্রহ অভিযানের ব্যর্থতায় টান পড়েছে খাদ্য মজুতেও। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামজাতকৃত মোট মজুদ ৪.৭৩ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ৩.৫৬ লাখ টন এবং গম ১.১৭ লাখ টন। এছাড়া বন্দরে ভাসমান অবস্থায় ১.১১ লাখ টন খাদ্যশস্য রয়েছে। যেখানে এক বছর আগে একই সময়ে সরকারের কাছে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১০ লাখ ৮৭ হাজার টন।

এমইউএইচ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।