চালের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:০৯ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চালের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে যেমন নিম্ন আয়ের মানুষ, তেমনি বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও। মোটা ও চিকন- সব চালেরই দাম বেড়েছে। ফলে আগের চেয়ে বিক্রি কমে গেছে এসব দোকানির।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সুমন মিঞা বলেন, আমার ছোট মুদির দোকান থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চার বস্তা চাল বিক্রি হতো। কিন্তু চালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কমে গেছে বিক্রি। আগে একজন ক্রেতা একসঙ্গে ২০-৩০ কেজি চাল কিনতেন কিন্তু এখন মাত্র চার-পাঁচ কেজি চাল কেনেন। আগে সারাদিনে তিন-চার বস্তা চাল বিক্রি হলেও এখন দু-এক বস্তা বিক্রি হয়। চালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মতো আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

সাধারণ মানুষ আগে যে পরিমাণ চাল কিনত এখন তা কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সব চালেই প্রায় ১০ টাকা দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চালের দাম কমে আসবে। ফলে আগে যারা একসঙ্গে ২০-৩০ কেজি চাল কিনতেন, তারা এখন কম কিনছেন। তারা ভাবছেন, দাম কমলেই বেশি করে চাল কিনবেন।

আরেক দোকানি হাবিবুর রহমান জানান, তার চালের ব্যবসায়ও মন্দাভাব। বলেন, আগে মিনিকেট চাল বিক্রি করতাম ৫২-৫৫ টাকায়। একই চাল বর্তমানে ৬৫-৬৭ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই কমেছে চাল বিক্রি। কচুক্ষেত থেকে আমরা চাল কিনে এনে বিক্রি করি। সেখানে আড়তদাররা আমাদের কাছ থেকে প্রতি বস্তায় বেশি দাম রাখছেন। সে কারণে আমরাও খুচরা বিক্রিতে প্রতি কেজি চালে বেশি দাম রাখছি।

হাবিবুর রহমানের যুক্তির সঙ্গে মিল পাওয়া গেল ওই বাজারের সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে। শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাজারে এসেছেন চাল কিনতে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা পাঁচজন মিলে মেসে থাকি। খাওয়ার জন্য সব সময় একবারেই চাল কিনতাম। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে একবারে চাল কেনা হচ্ছে না। এখন শুধু প্রতিদিন খাওয়ার জন্য তিন-পাঁচ কেজি করে চাল কিনছি। দাম কমলে একবারে বেশি করে চাল কিনব।

চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, চাল নিয়ে চালবাজি বন্ধ এবং শতভাগ রেশনিং পদ্ধতি চালুর দাবিতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য বছরে চালের চাহিদা প্রায় তিন কোটি ২৫ লাখ টন। দেশে তিন ফসলি ধান আমন, আউশ ও বোরো মিলিয়ে উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮৫ লাখ টন। উদ্ধৃত্ত থাকে প্রায় ৫০ লাখ টন।

গত তিন বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় বিগত দিনে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ঢেকুর তোলে। প্রতি বছরই কৃষকের গোলায় ধান বিক্রি হওয়ার পর খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল সংগ্রহের অভিযানে নামে। এতে করে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা ঠিকই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর হাওরে অতিবৃষ্টি ও বন্যার ফলে সরকারি হিসাবে ২০ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছে। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে পর্যাপ্ত চাল গুদামে মজুদ আছে। চাল নিয়ে মজুতদার, আড়তদার, মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা চালবাজি শুরু করেছেন। ফলে চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকার চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করার পরও চালের দাম কমছে না। উল্টো মোটা চাল আমদানি করে একশ্রেণির অসাধু মিল মালিক ৩৪ টাকার চাল চিকন বানিয়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবি ও ওএমএস’র মাধ্যমে খোলাবাজারে যে চাল বিক্রি করছে সেখানেও শুরু হয়েছে এক চালবাজি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ভোক্তা অধিকার আইন নিজেরাই মানছেন না। ভোক্তাদের সিদ্ধ চালের পরিবর্তে আতপ চাল দিয়ে একপ্রকার প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একে অপরের দোষারোপের যাতাকলে পড়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছি। একটি পরিবারের দৈনিক চাল কিনতে ব্যয় হয় আড়াইশ টাকা।

দেশের ১৬ কোটি নাগরিককে সুস্থ ধারায় জীবনযাপন করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ন্যায্যমূল্য পাইয়ে দিতে শতভাগ রেশনিং পদ্ধতির বিকল্প নেই- যোগ করেন তিনি।

এদিকে বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, চাল মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ মজুতের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। অবৈধ মজুতদারদের ভোক্তা অধিকার আইন, অবৈধ মজুত সংক্রান্ত আইনসহ সব আইনে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। সম্প্রতি বন্যায় হাওরে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে চালের সঙ্কট দেখা দেয়। কিন্তু ওই সঙ্কট মেটাতে যে চাল আমদানি হচ্ছে তা তুলনামূলক অনেক বেশি। ফলে ইতোমধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যে আরও কমবে।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, চালের দাম ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের প্রথমে নতুন ফসল উঠবে। কাজেই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চালের কোনো সঙ্কট নেই। বন্যা ও হাওরের পানি বেড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এর চেয়ে বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে।

গত ১০ দিনে হঠাৎ চালের দাম বেড়ে গেছে। বাজারের তথ্য অনুযায়ী, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬-১০ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, অবৈধভাবে চাল মজুতের কারণে দাম বেড়েছে। চালমালিকরা আড়তে চাল রেখে বাজারে সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন।

এএস/এমএইচএম/এআরএস/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।