চামড়ার দাম কমাতে তৎপর ব্যবসায়ীরা
সেপ্টেম্বরের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছরই ঈদের আগে কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেন এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহে কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য অপরিবর্তিত থাকা এবং দেশের ট্যানারিগুলোর চাহিদা বিবেচনা করে এবার দাম না বাড়ানোর পক্ষে আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল রোববার কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আড়তদার ও ট্যানারির মালিকদের নিয়ে বৈঠক করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী এ খাতের সংগঠনগুলো কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবে।
কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ), বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএইচএসএমএ)।
আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য ও ট্যানারিগুলোর চাহিদা বিবেচনায় প্রতি বছর কোরবানি পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়। এবার রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর করতে গিয়ে অনেক কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে গত বছরের অনেক চামড়া ট্যানারিগুলোতে রয়ে গেছে। এছাড়া স্থানান্তর প্রক্রিয়ার কারণে এ বছর বিদেশি ক্রেতাও কম এসেছে। নতুন করে কোনো চুক্তি হয়নি। এসব কারণে এবার চামড়ার চাহিদা কম। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে এবার চামড়ার মূল্য আগের বছরের মতো থাকবে অথবা আরও কম হতে পারে।
সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কোরবানির চামড়া সংগ্রহে কতটুকু প্রস্তুত, জানতে চাইলে বিটিএ’র সভাপতি ও ট্যানারি মালিক শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, শিল্পনগরীতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫৪টির মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ট্যানারি বর্তমানে চালু রয়েছে। এর বেশিরভাগই শুধু কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম ধাপের ওয়েট ব্লুর কাজ করছে। কিন্তু পরবর্তী ধাপ যেমন: ক্রাশড লেদার ও ফিনিশড লেদার তৈরির সুবিধা নেই চালু হওয়া বেশিরবাগ ট্যানারির। এ অবস্থায় আমরা চামড়া কিনব কিভাবে? কারণ চামড়া কিনে ফেলে রাখলে তো চলবে না। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা সংগ্রহ করতে হয়।
‘কারখানা বন্ধ, চামড়া কিনে কী করব’- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, এবার কোরবানি পশুর চামড়া কেনার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জানা গেছে, সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে দেড়শটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সেখানে ৬৯টি ট্যানারির কার্যক্রম চালু হয়েছে। পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছে ২৩টি। বাকিগুলোতে আংশিক কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আগামীকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আড়তদার ও ট্যানারির মালিকদের ডেকেছে। বৈঠকে মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী আমাদের তিনটি সংগঠন বসে পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্য ও চাহিদা বিবেচনায় প্রতি বছর পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করি। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার মূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ট্যানারির কার্যক্রম বন্ধ। গতবারের অনেক মাল (চামড়া) পড়ে আছে। সবকিছু বিবেচনায় এবার চামড়ার দাম না বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে হাজারীবাগের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সুমন জানান, চামড়ার চাহিদা কম, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম- এমন নানা অজুহাত দিয়ে প্রতি বছরই দাম কমানোর পায়তারা করেন ট্যানারি মালিকরা। প্রতিবারই রাতের আঁধারে ট্যানারি মালিকরা কম দামে চামড়া কেনেন। ফলে বিপদে পড়েন ছোট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. টিপু সুলতান জাগো নিউজকে বলেন, স্থানান্তরের কাজ করায় বেশিরভাগ ট্যানারি বন্ধ রয়েছে। যেগুলো চালু রয়েছে তাদের কাজও ঢিলেঢালাভাবে চলছে। চামড়ার বিদেশি বায়ার আসছে না। নতুন কোনো চুক্তিও হচ্ছে না। ফলে চাহিদা কম। এসব কারণে দাম কমতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আগামী তিন/চার দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীরা বসে আলোচনা করে চামড়ার দাম নির্ধারণ করবেন। এ সপ্তাহের মধ্যে তা সংবাদ মাধ্যমে জানানো হবে। তবে এবার কোরবানি পশুর চামড়ার দাম কমার সম্ভাবনা বেশি বলেও জানান তিনি।
বিটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, দুই দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং এক দশমিক দুই শতাংশ ভেড়ার। এসব চামড়ার অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানি ঈদের সময়।
২০১৬ সালে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনেছিলেন ৫০ টাকায়; ঢাকার বাইরে এর দাম ছিল ৪০ টাকা। এছাড়া সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হয়। মহিষের প্রতি বর্গফুট চামড়া কেনা হয় ২৫ টাকা দরে।
২০১৫ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ধরা হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা; আর সারা দেশে খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এসআই/এমএআর/আরআইপি