সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে অচেতন অবস্থায় শুইয়ে আছে শিশু মুক্তামনি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওটি লাইটের উজ্জ্বল আলোতে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে একদল সার্জারি ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ।
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে দলনেতা চিকিৎসকের চোখের ইশারা করতেই তৎপর হয়ে উঠলেন সবাই। ছুরি-চাকু (চিকিৎসা যন্ত্রপাতি) চালাতে শুরু করলেন ক্ষুদে শিশুর হাতে। দক্ষ হাতে বাড়তি মাংস কেটে কেটে ট্রেতে রাখতে লাগলেন।
অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণকারী এক চিকিৎসক জানান, সে এক ভঙ্ককর দৃশ্য। যখন হাতের মাংসগুলো কাটা হচ্ছিল তখন সার্জনরা ছাড়া অন্য সবাই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন।
চিকিৎসকরা জানান, শনিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিট থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মুক্তামনির হাত থেকে তিন কেজি মাংস অপসারণ করতে সক্ষম হয় বিশেষজ্ঞ দল। ছোট্ট এই শিশুটি হাতে বাড়তি পাঁচ কেজি ওজনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিল। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েক দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অবশিষ্ট দুই কেজি বাড়তি মাংস অপসারণ করা হবে।
দেশব্যাপী সরকারি মেডিকেল কলেজে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে মুক্তামনির হাত থেকে বাড়তি মাংস অস্ত্রোপচারকালে কেমন অনুভূতি হচ্ছিল জানতে চাইলে বলেন, ‘বাচ্চা একটি মেয়ে এত বড় বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিল। যাই হোক অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। এখন সে সুস্থ থাকলেই হলো। মেয়েটি যেন সুস্থ থাকে সেজন্য চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছেন।’
আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মুক্তামনি কেমন আছে জানতে চাইলে ডা. সেন জানান, আপাতত ভালো থাকলেও অস্ত্রোপচার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। তার লিভারে আগে থেকেই সমস্যা রয়েছে, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া রক্তের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসকরা সর্বদা প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
এমইউ/বিএ/জেআইএম