নির্বাচনে ভোট পেতে প্রকল্প নিলে সমস্যা কোথায়?

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৬:১৮ এএম, ০৯ আগস্ট ২০১৭

আ হ ম মুস্তফা কামাল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মোস্তফা কামাল এখন পর্যন্ত তিনবার এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে কুমিল্লা- ১০ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুমিল্লা জেলার (দক্ষিণ) আহ্বায়কেরও দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় অভিজ্ঞ গাণনিক এ রাজনীতিকের। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে দেশে চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া, জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন, এসডিজির বাস্তবায়নসহ সামষ্টিক অর্থনীতির নানা বিষয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মামুন আব্দুল্লাহদুই পর্বের ধারাবাহিকের প্রথমটি আজ প্রকাশিত হলো।

জাগো নিউজ : এর আগেও লক্ষ্য করা গেছে, নির্বাচনের আগেই এমপি-মন্ত্রীদের জন্য কোটি কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : প্রকল্প দিয়া যদি ইলেকশনে (নির্বাচন) ভোট পাওয়া যায় তাহলে সমস্যা কোথায়? ইলেকশন আইনের কোথাও কি লেখা আছে এটা করা যাবে, এটা যাবে না? কোথায় আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, কোথায় বলা আছে এটা সাংঘর্ষিক বা কন্ট্রাডিক্টরি (পরস্পরবিরোধী); বলেন আপনি?

জাগো নিউজ : এগুলো তো ভোট বাড়ানোর প্রজেক্ট…

আ হ ম মুস্তফা কামাল : অবশ্যই ভোটের প্রজেক্ট। আমাদের সমস্ত প্রজেক্টই ভোটের জন্য। গত তিন বছরে যত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সবই ভোটকে কেন্দ্র করে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। প্রকল্প হাতে নিলে যদি দেশের মানুষ ভোট দেয়- সেটা তো আমাদের জন্য ভালো।

planning

জাগো নিউজ : টিআইবি’সহ (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) অনেকে বলছেন, এসব প্রকল্প মূলত লুটপাটের জন্য। মোট বরাদ্দের ৬০ শতাংশের বেশি মন্ত্রী-এমপিদের পকেটে যায়। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : টিআইবিকে বলতে বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা কত টাকা করে নিয়েছেন? আমি কত টাকা নিয়েছি, সেটা বলতে বলেন। পারবে না। অনেক কথাই মুখে বলা যায় কিন্তু বাস্তবে প্রমাণ করা যায় না। আমি তো এক টাকাও পকেটে ঢোকায়নি, ১৫ বছর ধরে এমপি আছি।

জাগো নিউজ : আপনি নেননি কিন্তু অন্যরা কি নিচ্ছেন না?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : এমন অনেক এমপি আছেন যারা কোনো টাকাই নেন না। এখনও দেশের মানুষ সব অসৎ হয়ে যায়নি। বললেই হবে নাকি! এনবিআরে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) চাকরি করেন এমন এক কর্মকর্তাকে আমি চিনি যিনি ‘দিন আনে দিন খান’ অবস্থা।

জাগো নিউজ : কিন্তু অর্থমন্ত্রী তো বলছেন, সবাই অসৎ…

আ হ ম মুস্তফা কামাল : সেই অসৎ অন্য জিনিস। কথা দিয়ে কথা রাখে না বা মানুষকে ভালোবাসে না, এই টাইপের লোক অসৎ।

জাগো নিউজ : দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে সেটা একশ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে, সামগ্রিকভাবে নয়। উন্নয়নের এই বৈষম্য কেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : দেশে কোনো বৈষম্য হচ্ছে না। এটা ভুল ধারণা। আমরা যে পলিসি (পরিকল্পনা) নেই, সেই পলিসিতে সবাইকে তো সমানভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। তবে ইন-ইকোয়ালিটি (বৈষম্য) যেন ব্যাপকহারে না বাড়ে সেই বিষয়েও আমাদের উদ্যোগ আছে। এ বিষয়ে যতটুকু ইনিশিয়েটিভ (উদ্যোগ) নেয়া যায়, আমরা তা নিচ্ছি এবং নেব। ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জাগো নিউজ : তাতে কি কাজ হয়েছে?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : সবার জন্য সমান গ্রোথ নিশ্চিতের পলিসি আমরা নিয়েছি। এর বাইরে বলা মুশকিল। পূর্বে করা বিবিএস’র (হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে) যেটা হয়েছে, সে তথ্য সবার কাছে আছে। এর বাইরে নতুন কোনো তথ্য আপাতত নেই।

জাগো নিউজ : আপনারা তো সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) হাতে নিয়েছেন। এর বাস্তবায়ন ও সুফল কতটুকু জনগণ পাচ্ছেন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : হ্যাঁ, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা যেটি আমরা নিয়েছি তার আলোকে বলতে পারি, যারা ধনী তাদের বেশি করে করের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা এটিকে বলি, রি-ডিস্ট্রিবিউট অ্যাপ্রোচ (পুনর্বিন্যাস পদ্ধতি)। এ পদ্ধতির আওতায় যারা ধনী তাদের বেশি পরিমাণে ট্যাক্স দেয়া লাগে, বেশি পরিমাণ সম্পদে কর দেয়া লাগে। এর মানে ধনীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা গরিবের মাঝে বিতরণ করা। এভাবেই আমরা ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য কমানোর ব্যবস্থা করেছি।

জাগো নিউজ : বৈষম্য কমাতে আর কোনো উদ্যোগ?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : বেশকিছু উদ্যোগ ইতোমধ্যে আমরা কার্যকর করেছি। এছাড়া কিছু উদ্যোগ আমাদের হাতে আছে। আগে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে বেতনের ব্যাপক বৈষম্য ছিল। সরকারিপর্যায়ে বেতন বাড়িয়ে আমরা সেই বৈষম্য কমিয়ে এনেছি।

planning

জাগো নিউজ : অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ, দেশে সুষম উন্নয়ন হচ্ছে না। তারা আরও অনেক সমস্যার কথা বলেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন…

আ হ ম মুস্তফা কামাল : অর্থনীতিবিদদের কথা বলে কোনো লাভ নেই। তারা কিছুই জানেন না। দেশে কতজন ধনী আছেন, কতজন গরিব- তারা সেটিও বলতে পারবেন না।

অনেকে বলেন, আমি নাকি অনেক ধনী। কেউ কেউ বলেন, লাখ টাকা থাকলেই নাকি ধনী হওয়া যায়। এটা তো গড়পড়তায় বলে দেয়া সহজ।

জাগো নিউজ: আপনি তো শীর্ষ করদাতাদের মধ্যে একজন?

আ হ ম মুস্তফা কামাল : হ্যাঁ, আমি কর দেই। তাই বলে আমি ধনী নই। দেশে অনেক ধনী মানুষ আছেন যারা এক পয়সাও কর দেন না। তাই তাদের বাদ দিয়ে আমাকে ধনীর কাতারে ফেলা ঠিক হবে না।

আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হাজী বাবরু মিয়া এবং মাতা সায়েরা খাতুন। ১৯৭০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একত্রে) চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় সম্মিলিতিভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছিলেন ‘লোটাস’ উপাধি। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় নিজ এলাকা কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা- ৯ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা- ১০ নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯-১৩ সময়কালে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির মতো পদও অলঙ্কৃত করেন।

তিনি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি’র সহ-সভাপতি মনোনীত হন। ২০১৪ সালের ১ জুলাই সংস্থাটির নির্বাচিত সভাপতিও হন। আইসিসির নিয়ম-কানুনের অপব্যবহারের প্রতিবাদে ওই পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন। এ কারণে দেশে-বিদেশে প্রশংসাও পান। দশম সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বড় ভূমিকা রয়েছে তার।

এমএ/এমএআর/আরআইপি

টিআইবিকে বলতে বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা কত টাকা করে নিয়েছেন? আমি কত টাকা নিয়েছি, সেটা বলতে বলেন। পারবে না। অনেক কথাই মুখে বলা যায় কিন্তু বাস্তবে প্রমাণ করা যায় না

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।