দেশ মানুষ ও বিচার বিভাগের কল্যাণেই আইন প্রণয়ন

আমানউল্লাহ আমান
আমানউল্লাহ আমান আমানউল্লাহ আমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৭ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৭

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য তিনি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত জীবনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা ও এক-এগারোর সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। কথা বলেন ষোড়শ সংশোধনী, আইনি জটিলতা ও সম-সাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। দুই পর্বের ধারাবাহিকের প্রথমটি আজ প্রকাশিত হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমানউল্লাহ আমান।

জাগো নিউজ : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে দেয়া রায়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম : সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহুপূর্বে করা এবং পরবর্তীতে জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পরিবর্তে নতুন ব্যবস্থা যেটা প্রবর্তন হয়েছে- দুটি বিষয়েই বেশকিছু আইনানুগ বিষয় জড়িত আছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে, এমন হতে পারে সংসদকে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করতে হবে; না হয় সংবিধানের যে জায়গায় আর্টিকেল ৯৬ আনা হয়েছে সেটা আবার পরিপূর্ণভাবে আগের স্থানে নিয়ে যেতে হবে।

পঞ্চম সংশোধনী মামলায় সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, যার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই, তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যা যা করেছেন সব বে-আইনি। সব বে-আইনি হলে এর ভেতরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এসে যায়। ষোড়শ সংশোধনী মামলায় যে রায়টা দেবে সুপ্রিম কোর্ট, সে রায়ে দেখতে হবে প্রশ্নগুলোকে তারা কিভাবে অতিক্রম করেছেন। যদি প্রশ্নগুলোকে অতিক্রম করতে না পারেন তাহলে সেটা হবে একটা গোঁজামিল জাতিও রায়। গোঁজামিল রায় কিন্তু আজ হোক, কাল হোক একদিন আবার পরিবর্তন হতে পারে। ফলে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে আইনি জটিলতার ব্যাপারে আমাদের আতঙ্ক থেকেই যায়।

জাগো নিউজ : ষোড়শ সংশোধনী সম্পর্কে হাইকোর্টের আদেশের সময় অ্যামিকাস কিউরিরা যে মতামত দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আদেশের সময় সম্পূর্ণ তার উল্টো মতামত দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম : অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে যারা নিয়োগ হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই একই চিন্তা-চেতনার মানুষ। কেউ কেউ সামরিক শাসন এবং সামরিক শাসন থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুবিধাভোগী। এ ক্ষেত্রে আরও নিরপেক্ষ বা ভিন্নমত পোষণ করেন এমন আইনজীবীদেরও অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি সেটা করেনি। সেক্ষেত্রে অ্যাটর্নি জেনারেলেরও উচিত ছিল আরও কিছু নাম আদালতের কাছে দেয়া। একপাক্ষিক চিন্তা-চেতনার বাইরে বহুপাক্ষিক চিন্তা-চেতনার মানুষের মতামত শোনা উচিত ছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব হয় ব্যস্ত ছিলেন অথবা তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) বিষয়টি অবহেলা করেছেন। ফলে ওয়ান সাইডেড বক্তব্য পেয়েছেন উচ্চ আদালত। মানুষের কাছে মনে হয়েছে একজন পক্ষে বলছেন, আটজন বিপক্ষে বলছেন। একপাক্ষিক চিন্তা-চেতনার মানুষদের বক্তব্য শুনলে, যা হবার তাই হয়েছে।

জাগো নিউজ : গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম : আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল দু’জন খুবই ভালো বন্ধু। তাদের কথোপকথন কখনও আমার কাছে উত্তপ্ত মনে হয়নি।

জাগো নিউজ : সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আসলে কিভাবে দেখছেন?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম : আদালতের কোনো রায়ের কারণে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ সাংঘর্ষিক স্থানে যায় না। তবে প্রত্যাশা থাকে যে উভয় বিভাগ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সমন্বিতভাবে এগোবার চিন্তা-চেতনাটা মাথায় রাখবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ রায়ের পর তার দলীয় নেতাকর্মীদের বরং সংযমের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। এর দ্বারা প্রতিয়মান হয়, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আদালতের রায়কে শ্রদ্ধা করেন। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, বিদ্রূপ করা বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেননি। প্রধান বিচারপতি কিছু কিছু কথা বলেন, যে কথায় মনে হয় যেন নির্বাহী বিভাগ জুডিশিয়ারির ওপর অ্যাটাক করেছে বা করতে চাচ্ছে- এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। অনেক মামলার রায় সরকারের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে আমরা দেখলাম ষোড়শ সংশোধনী মামলায় যে সাতজন বিচারক রায় দিয়েছেন, তাদের সাতজনই বর্তমান সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে চাইলে তার (প্রধানমন্ত্রী) আমলে নিয়োগপ্রাপ্তরা তার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতেন না।

জাগো নিউজ : বিদ্যমান আইনি জটিলতাগুলো থেকে উত্তরণের বিষয়ে কী ভাবছেন?

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম : আওয়ামী লীগ কখনওই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি। যে আইনগুলো মানুষের কল্যাণে প্রয়োজন, যে আইনগুলো স্বচ্ছতার প্রশ্নে প্রয়োজন, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এবং আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে যে যে প্রক্রিয়ায় এটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। কেউ যাতে মনে না করে আমরা আইন প্রণয়ন করে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাই অথবা আমাদের স্বার্থে করতে চাই। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণ, দেশের কল্যাণ ও বিচার বিভাগের কল্যাণের জন্য আমরা আইন প্রণয়ন করছি। আমাদের কৃতকর্মের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সাধারণ মানুষের কাছে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

এইউএ/এমএআর/আরআইপি

কেউ যাতে মনে না করে আমরা আইন প্রণয়ন করে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।