বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে শিগগিরই চিঠি

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ২০ জুলাই ২০১৭

দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা পরিচালনা করছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য শিগগিরই চিঠি দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

শেয়ার ছাড়তে এরই মধ্যে কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে কোম্পানিগুলোর মনোভাব ছিল নেতিবাচক। তবে দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে এসব কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে বাধ্য করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী ২৬ জুলাই বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে শেয়ার ছাড়ার অনুরোধ করা হলে কোম্পানিগুলো এ দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে বসেছে।

ফলে সরকারের আন্তরিক আগ্রহ থাকার পরও শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তা সত্ত্বেও দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এ বিষয়ে আবারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ব্যবসা করছে এমন সাত বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। সেগুলো হলো- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আইপিডিসি ফিন্যান্স এবং রেকিট অ্যান্ড বেনকাইজার। বাকি চার কোম্পানির শেয়ার ছাড়তে সম্প্রতি সরকার ও কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, সরকারের কাছে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজারের দুই কোটি দুই লাখ শেয়ার রয়েছে, যা ওই কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৪ শতাংশ। ইউনিলিভারের সাত লাখ ৬৬ হাজার বা ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের হাতে। সানোফি বাংলাদেশের ৪৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং নুভিস্তা ফার্মার ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে। এর একটি অংশ বাজারে ছাড়তে সরকারি এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এসব কোম্পানি বিশ্বের অন্যান্য দেশে তালিকাভুক্ত। বাংলাদেশেও তাদের তালিকাভুক্ত হওয়া উচিত। শেয়ারবাজারের অন্যতম সমস্যা হল বড় কোম্পানিগুলোর আর্থিক জালিয়াতি। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ থাকে। ফলে এসব কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসা ইতিবাচক। পাশাপাশি সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের শেয়ার ছাড়া উচিত। এমনটি হলে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।

সূত্র জানায়, বহুজাতিক অনেক কোম্পানি এ দেশে এসে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। কিন্তু অন্য দেশে এসব কোম্পানি ঠিকই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে তালিকাভুক্তির নজির রয়েছে।

২০০৯ সালে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আর কোনো বহুজাতিক কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। দেশের শীর্ষ বীমা কোম্পানি মেডলাইফ অ্যালিকো এ তালিকায় রয়েছে। ওষুধ কোম্পানির মধ্যে আছে সেভরন, নোভাডিস ও অ্যাভিনটিস। কোনোভাবেই এদের শেয়ারবাজারে আনা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, বর্তমানে বহুজাতিক ও জয়েন্ট ভেঞ্চার মিলে ১৭টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। কোম্পানিগুলো হল- বাটা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার পেইন্টস, ফুয়াং ফুড, ফুয়াং সিরামিক, গ্লাসকো স্মিথ কেলাইন, গ্রামীণফোন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, লিন্ডে বিডি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, রেকিট অ্যান্ড বেনকেইজার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, আরএকে সিরামিক ও সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির কারণে এসব কোম্পানি ১০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পায়। বিনিয়োগকারীদেরও এসব কোম্পানির ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। ফলে বর্তমানে এসব কোম্পানির বাজার মূলধন ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

 

এমইউএইচ/এসআর/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।