থমকে আছে মানবতাবিরোধী ১৮ আপিল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আরও ১৮টি আপিল শুনানির অপেক্ষায় থমকে রয়েছে। এর আগে সাত মামলায় আপিল নিষ্পত্তি করে ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর করেছে সরকার। অপর আসামি সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাবাসের রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ১০টি মামলায় বিচার কার্যক্রম চলছে। তবে, একটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য (সিএভি) অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা থেকে আরও ১১টি মামলায় প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে প্রসিকিউশনের কাছে। এসব মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে প্রসিকিউশন টিম।
মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফমালচার্জ) গঠনের জন্য প্রস্তুতির কাজ চলছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।এছাড়া ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষণার পর আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৮টি মামলা।
সুত্র জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭৮টি মামলায় ২৩৭ জন আসামির সবাই স্থানীয় ও মাঠ পর্যায়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। এদের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ছয় আসামিসহ পলাতকদের হিসাবও রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচার কাজ চলছে। এর মধ্যে দুই ট্রাইব্যুনাল মিলে সর্বমোট ২৮টি রায় ঘোষণা করেছে। পরে একটি ট্রাইব্যুনাল রেখে অপরটি নিষ্কৃয় করা হয়। তবে আসামি ও মামলার সংখ্যা বাড়লে ট্রাইব্যুনালও বাড়াতে পারে বলে জানা গেছে।
২৮ মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সাত মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আপিল নিষ্পত্তি করে এখন পর্যন্ত ৬টি ফাঁসি কার্যকর করেছে। অপর একটি মামলার রিভিউ নিষ্পত্তি করা হলেও রিভিউর রায় প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ২৮ মামলায় ৫৭ আসামির বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ২৩ আসামি পলাতক থাকায় তারা আপিল করেননি। ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষণার পর আপিল শুনানির অপেক্ষায় থাকার সময় দুইজন হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা গেছেন।
তবে যারা আবেদন করেছেন তাদের আপিল শুনানির কোনো উদ্যোগ নেই। রাষ্ট্রপক্ষ ও সুপ্রিম কোর্ট সূত্র দাবি করছে মামলাগুলোর শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে।
অপরদিকে এসব আপিল শুনানির কোনো উদ্যোগ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ ও বিচারপ্রার্থীরা।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, আশা করব পেন্ডিং আপিলগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শুনানি করা হবে।
অপর প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ে ঘোষিত আগের মামলাগুলো সময় মতো নিষ্পত্তি হলেও সৈয়দ কারসার থেকে শুরু করে বর্তমান মামলাগুলো শুনানি হচ্ছে না। এসব আপিল শুনানি সুপ্রিম কোর্টে থমকে আছে। এতে সাধারণের সঙ্গে আমারও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, মামলাগুলো শুনানি করা হোক, যদি শুনানি না করা হয় তাহলে ছেড়ে দিক। শুধুমাত্র প্রসিকিউশন চাইলেই হবে না, এটা আসামি পক্ষের ন্যায় বিচারেরও প্রশ্ন।
রানা দাস গুপ্ত আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি না দিয়ে বছরের পর বছর ধরে কাস্টডিতে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। তাই এগুলো নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। প্রসিকিউশন ও আসামি উভয়ই ন্যায় বিচার পবেন।
এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলাগুলোর মধ্যে ৬টির রায় কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে সাঈদীর রিভিউ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কিন্তু আপিলের অপর মামলাগুলোর শুনানি হচ্ছে না। আমি আশা করছি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় আপিল শুনানির বিষয়ে ম্যানশন করবেন। ম্যানশন করার পর হয়তো আপিল বিভাগে মামলাগুলো শুনানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জাগো নিউজকে জানান, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরে দণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন কেন শুনানি হচ্ছে না তা প্রধান বিচারপতির দফতরকে জিজ্ঞাসা করেন।
অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জাগো নিউজকে জানান, এ বিষয়ে কথা বলবেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ।
হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ জাগো নিইজ জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এমন আরও কত মামলা পেন্ডিং রয়েছে। এগুলো পর্যায়ক্রমে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় করা আপিল আবেদন কবে নাগাদ শুনানি শুরু হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
সাত আপিলের রিভিউ নিষ্পত্তি এবং ছয় ফাঁসি কাযকর :
বিচারকাজ শুরু হওয়ার পর গত ছয় বছরের বেশি সময়ে ২৮ মামলায় ৫৭ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে আপিলের পর রিভিউ নিষ্পত্তি করে ফাঁসি হয়েছে শীর্ষ ছয় আসামির।
তারা হলেন- জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
এফএইচ/এমআরএম/এএইচ