সেবা দিতেই লেগুনা চালান এই সরকারি কর্মকর্তা


প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ২৪ জুন ২০১৭

অর্থের জন্য নয়, সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়া এবং অলস সময়কে কাজে লাগানোর জন্য ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর সড়কে লেগুনা নিয়ে নামেন এলজিইডির কর্মী নিজামুল হক। এ পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি একজন শিক্ষকও। অফিস শেষ করে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফার্মগেটের একটি কোচিং সেন্টারে (নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ রয়েছে) নিয়মিত ক্লাস নেন তিনি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ান তিনি।

শনিবার বেলা দেড়টায় এ মানুষটির দেখা হয় রাজধানীয় শ্যামলী রিং রোডের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। সেখানে তিনি লেগুনা চালকের আসনে বসে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ রুটেই শিয়া মসজিদ থেকে বাড্ডা পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিনগুলোতে লেগুনা চালান তিনি।

এদিন দুপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনেই এ প্রতিবেদক নিজামুল হকের গাড়িতে ওঠেন এবং চালকের পাশের আসনে বসার সুযোগ পান।

গাড়িতে ওঠার পরই তার সামনে ফ্যানটা মুভ করে দিলেন আমার দিকে। অবাক হলাম। তাকালাম তার দিকে। দেখলাম অন্যসব চালকদের থেকে পুরোপুরি আলাদা তিনি। কথাগুলোও বেশ মিষ্টি। পোশাকও মার্জিত। পায়ে দামি জুতা। এসব দেখে বার বার মনে প্রশ্ন জাগছিল, উনার হয়তো আরও কোনো পরিচয় আছে।
জিজ্ঞেস করলাম হেলপার কোথায় আপনার, বললেন, উইথআউট হেলপার।

Nizamul

ভাবনার সঙ্গে মিলতে শুরু করল উনার আচরণ। বললাম, আর কি করেন? তিনি বললেন, আপনি কি সাংবাদিক? বললাম, না। মিষ্টি করে হাসলেন। এরপর উপরোক্ত পরিচয়গুলো দিলেন।

তবে তার লেগুনায় কোনো হেলপার নেই। কেউ ইচ্ছে হলে ভাড়া দেবে, না হলে দেবে না। এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

বললেন, আমার অর্থের প্রয়োজন নেই। আল্লাহর রহমতে সরকারি চাকরি করি। ছাত্রদের পড়াই। সেখান থেকেই ভালো টাকা আয় করি।

তিনি বললেন, ঢাকা শহরের অসংখ্য মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে। হাজার হাজার গাড়ি তবুও মানুষ গাড়িতে ওঠার সুযোগ পায় না। এ বিষয়টি চিন্তা করেই গত বছর গাড়িটি কিনেছি। সপ্তাহে বেশির ভাগ দিন গাড়িটি বাড়িতে পড়ে থাকে। যেদিন ছুটি থাকে সেদিন বের হই গাড়ি নিয়ে। মূলত সেবা দেয়ার জন্যই গাড়ি চালাই। গাড়ি চালানোর সময় সৎ মানুষকে দেখলে ভালো লাগে, অসৎগুলোকে দেখলে কষ্ট হয়। তখন মনে হয় তারা সচ্ছল হলে নিশ্চয় ভাড়াটা দিয়ে যেত।

তিনি বলেন, হেলপার ছাড়াই গাড়ি চালাই। সামনে থেকে যখন দেখি কেউ থামানোর ইশারা করেছে থামিয়ে তাদের তুলি। অনেকে সামনে এসে ভাড়া দিয়ে যান। অনেকে আবার নেমে চুপ করে চলে যান। তখন খুব হাসি পায়। তারা তো আর জানে না যে আমি শখের গাড়ি চালক।

Nizamul

ছবি তুলতে চাইলে তিনি অনাগ্রাহ দেখান। তিনি বলেন, অসংখ্য ছাত্র আছে আমার তারা দেখলে অন্য কিছু ভাবতে পারে। তাছাড়া সরকারি চাকরি করি সেখানেও কোনো সমস্যা হতে পারে।

আপনার এই কর্মে সমস্যার কোনো সম্ভাবনাই নেই, বরং অসংখ্য মানুষ আপনার এ উদ্যোগ দেখে যেমন শিখতে পারে তেমনি নিজের বেকারত্ব তারা দূর করতে পারে। প্রতিবেদকের মুখে এ কথা শোনার পরই তিনি বললেন, আমি নিশ্চিত আপনি মিডিয়াকর্মী। এরপর বিদায় নেন তিনি।

নিজামুল হক থাকেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারি কোয়ার্টারে। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায়।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।