কবরেও ঠাঁই হচ্ছে না বেওয়ারিশ লাশের!


প্রকাশিত: ০৬:২৩ এএম, ১৯ জুন ২০১৭

রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশের ঠাঁই হচ্ছে না। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বহু বছর যাবত জুরাইন কবরস্থানে নাম পরিচয়হীন অর্থাৎ বেওয়ারিশ লাশের দাফন করে আসছে।

কিন্তু সম্প্রতি জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানিয়ে লাশ ফিরিয়ে দিচ্ছে। শুধু বেওয়ারিশ লাশই নয়, জুরাইন কর্তৃপক্ষ সাধারণ লাশ দাফন না করে ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতির কারণে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম লাশ না নেয়ায় গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ১৩টি ও স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ মর্গে ৫টিসহ মোট ১৮টি বেওয়ারিশ লাশ মর্গে পড়ে আছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একাধিক ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম ও জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষও লাশ দাফন নিয়ে জটিলতার কথা স্বীকার করেছেন। ঢামেক মর্গের মরচুয়ারি এসিষ্ট্যান্ট সিকান্দার আলী সোমবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বর্তমানে ঢামেক মর্গের ৫টি মরচুয়ারি কুলারের ৩টি বিকল।

তিনি জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩টি বেওয়ারিশ লাশ জমা হলেও আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম লাশগুলো না নেয়ায় এগুলো সংরক্ষণে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মরচুয়ারি কুলারে জায়গা না হওয়ায় লাশগুলো চেইন ব্যাগে করে রাখা হচ্ছে। লাশগুলোতে পচন ধরায় মর্গ এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজের মরচুয়ারি এসিষ্ট্যান্ট শ্যামল জানান, বর্তমানে তাদের মর্গে ৫টি বেওয়ারিশ লাশ রয়েছে। তন্মধ্যে ২টি লাশ কিছুদিন মরচুয়ারি কুলারে রাখার জন্য থানা পুলিশ আবেদন করেছে। তবে তিনটি লাশ দাফনের কথা বলা হলেও জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ আপাতত নিতে রাজি না হওয়ায় মর্গেই রাখা আছে।

সোমবার সকালে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কাকরাইল অফিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা কেন মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশ সংগ্রহ করছেন না জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের লাশ নিতে কোন সমস্যা নেই তবে জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে রাজি হচ্ছে না। তারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বেওয়ারিশ লাশ দাফন না করে কেন ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জুরাইন কবরস্থানের মোহরার সোয়েব হোসাইন জাগো নিউজের কাছে এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বৃষ্টির কারণে জুরাইন কবরস্থানে দাফনের পরিবেশ নেই। দুই কোদাল মাটি কাটলেই পানি উঠে যাচ্ছে। এ কারণে শুধু বেওয়ারিশই নয়, সাধারণ লাশও দাফনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

তিনি জানান, ১৭ একর আয়তনের জুরাইন কবরস্থানে প্রতি মাসে প্রায় ৬শ’লাশ দাফন করা হয়। তন্মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বেওয়ারিশ লাশ। আগে আজিমপুর কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হলেও বিগত বছর দুয়েক যাবত সেখানে দাফন হচ্ছে না। ফলে জুরাইন কবরস্থানে লাশ দাফনের চাপ বাড়ছে। বর্তমানে মূলত কবরস্থানে পানি উঠায় লাশ দাফন হচ্ছে না ।

সোয়েব হোসাইন আরও বলেন, বেওয়ারিশ লাশ দাফনের চাপ একমাত্র এই কবরস্থানের ওপর কমাতে বিকল্প হিসেবে ৬০ একর আয়তনের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও ৮০ একর আয়তনের মোহাম্মদ বসিলা কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা যেতে পারে।

এমইউ/ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।