২৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে স্থবিরতা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দখল হওয়া জমিতে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি সেন্টার, গ্যারেজ, দোকান, ক্লাবঘর, কাঁচাবাজার, ঈদগাহসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
দখলের তালিকায় ওয়াসাও রয়েছে। রাজধানীর ২৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৩টির জমি ও ভবন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর পল্লবীর বালুরমাঠে ময়লা-আবর্জনার মধ্যে চলছে বনফুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ভাঙা টিন দিয়ে তৈরি বিদ্যালয়টি। এর সামনে ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধ আর আবর্জনায় ঘেরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে ১৩০ শিক্ষার্থী এখানে পড়ালেখা করছেন। বিদ্যালয়ের জমি দখল হওয়ায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এখানে চারটি ঘর তৈরি করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে পরিবেশ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, বেড়ার ঘরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। স্কুলের জায়গা দখল হওয়ায় ময়লার ভাগাড়ের পাশে স্কুলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্কুলের জমি উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি কাজ চলছে। তবে কত দূর কী হয়েছে তা জানি না।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজধানীর প্রাথমিক স্কুলের জমি/ভবন দখলমুক্ত করতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ৩নং সাব-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ওই বছরই একাধিক প্রতিবেদন তৈরি করেন। কমিটি দখল করা ৪৮টি বিদ্যালয়ের জমি ও ভবন উদ্ধারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং ঢাকার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ডিপিইও) এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব জমি উদ্ধার সম্ভব হয়নি। বরং নতুন করে ডেমরার ব্রাহ্মণচিরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের জমি দখল হয়েছে।
বেদখল জমি/ভবনের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় দোকান বসিয়েছে। এগুলো উচ্ছেদে সুপারিশ করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
সূত্রাপুরে ওয়ারীর যোগীনগর রোডে এমএ আলীম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলকৃত পাঁচ শতাংশ জমি উচ্ছেদের জন্য দখলদারদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা উদ্ধার হয়নি।
এদিকে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে মিরপুর-১২ এলাকায় সরকারি আব্দুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি।
পল্লবীর খলিলুর রহমান বিদ্যালয়ের অবৈধ জায়গা উচ্ছেদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কিছু বলা না হলেও সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণে অনুমতি পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
আরামবাগ দিলকুশা এলাকায় বিদ্যালয়ের জমিতে দোকানগুলো দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে ভাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরে সাতমসজিদ রোডে বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ জমির দাতা মালু ব্যাপারীর ওয়ারিশদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মাতুয়াইলে পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১ শতাংশ জমি উদ্ধারে দাতা খোঁজা হচ্ছে। মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় মতিঝিল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাচীর নির্মাণ করেছে। যা উদ্ধারে প্রক্রিয়া চলছে।
এছাড়া মিরপুরের শহীদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডেমরার মাতুয়াইল ২ নম্বর, মতিঝিলের আইডিয়াল মুসলিম বালক/বালিকা বিদ্যালয় ও মাদারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমিতে রয়েছে ওয়াসার পাম্প। এ পাম্প সরানোর প্রক্রিয়া চলছে।
কোতোয়ালি থানার নাজিরাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি শ্রেণিকক্ষে মালামাল রেখে তালা দিয়েছে নাজিরাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ জমি দখলে রেখেছে খেলাঘর সংগঠন। এ বিদ্যালয়ের সামনের তিনটি দোকান মহিলা সমিতির দখলে। এসব উচ্ছেদে বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া কোনো কোনো বিদ্যালয়ের জমি বেদখল হওয়ার পর তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিছু স্কুলে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে অনুরোধও জানানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহিন আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলের জমি উদ্ধারে অনেকাংশে সফল হয়েছি। প্রায় ৬০ শতাংশ জমি উদ্ধার হয়েছে। তবে মালিকানা জটিলতার কারণে কিছু বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না। আবার কোথাও দখলদারদের প্রভাবে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
এমএইচএম/এএইচ/এমএআর/জেআইএম