বুড়িগঙ্গার দূষণ কমাতে বড় উদ্যোগ
একসময় বুড়িগঙ্গা ছিল রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র। যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ঢাকার পুরনো শহর। কিন্তু যে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শহর, সেই বুড়িগঙ্গার এখন মরণ দশা।
তবে বুড়িগঙ্গাকে দখলমুক্ত করে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে এবার বড় উদ্যোগ হাতে নেয়া হচ্ছে। এর আগে গৃহীত ‘বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক প্রকল্পটি নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। নতুন এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ’ কোটি টাকারও বেশি।
এর আগেও বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে পুংলী, নতুন ধলেশ্বরী, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা খনন করে যমুনা থেকে স্বচ্ছ পানি এনে প্রবাহ বাড়ানোর পরিকল্পনাও করা হয়। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় চর জেগে ওঠাসহ নানা সমস্যায় তা বাধাগ্রস্তয়।
বুড়িগঙ্গার সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় নদীর চারপাশের বর্জ্য অপসারণ ও দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার মধ্যেও থেমে নেই দূষণ। এজন্য বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি নতুনভাবে শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১শ’ কোটি টাকার বেশি। ফলে শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, পুংলী, নতুন ধলেশ্বরী, তুরাগের অনেক সমস্যা সমাধান হবে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে গৃহীত এ প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল পর্যন্ত (পাঁচ বছরে) এ প্রকল্পে ১১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধার প্রকল্প’ নতুন করে বিন্যাস্ত করার চিন্তা করছে।
এদিকে আদি বুড়িগঙ্গাসহ চার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে এবং নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে নৌ মন্ত্রণালয় গঠিত এ সংক্রান্ত ‘টাস্কফোর্স’। এরই ধারাবাহিকতায় নদীর দুই পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে জরিপ অধিদফতর থেকে নকশা তোলার কাজ চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৬০টি নকশা তোলা হয়েছে। এছাড়া বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অননুমোদিত ৪৫টি ধর্মীয় স্থাপনার বিষয়ে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আরও আলোচনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, রাজধানীর বিশাল জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নৌযানের মাধ্যমে যাতায়াত করে। এছাড়া নৌযানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মালামাল পরিবহন করা হয়। নৌযানসমূহে সৃষ্ট বর্জ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। নৌযানের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের।
ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকার গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের কঠিন বর্জের ৪০ শতাংশ, যা প্রায় ৩ হাজার টন নালা-নর্দমা, খাল, জলাভূমি হয়ে নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ঢাকার ইসলামবাগে বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে অবৈধ দখল ও বর্জ্য অপসারণের কাজ করছি।ফলে বুড়িগঙ্গার সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশবিদ প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বর্জে্যর প্রভাব অনেক বেশি। আগে বুড়িগঙ্গার দূষণে উৎস চিহ্নিত করতে হবে, অন্যথায় এ সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে না।
এমএ/এএইচ/জেআইএম